২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িশা উপকূল প্রত্যক্ষ করেছিল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আয়লা। ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের দিক থেকে আয়লা এখনও বাকিদের টেক্কা দিচ্ছে আনায়াসে। ঘূর্ণিঝড় আয়লা-র ঝাপটা সামলানোর পর থেকেই ভারতের পূর্ব উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকেন, আবার কবে কোন ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। তবে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা সত্যি প্রমান করে এরপর প্রায় প্রতি বছর নিয়ম করেই এপ্রিল মে মাস নাগাদ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। এরপর একে একে মান্ডৌস, তৌকতয়, সিত্রাং, অসনী, জাওয়াদ, গুলাব, শাহীন, ফণী, আমপান, ইয়াস, মোচা এবং চলতি বছর আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। কারাই বা করে এই নামকরণ?
খুব সাধারণ ভাষায় উত্তর দিতে হলে বলতে হয়, সাধারণ মানুষ যাতে ঘূর্ণিঝড়কে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারেন তার জন্যই নামকরণ করা হয়। এছাড়া, পরবর্তী সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মিডিয়ার আলোচনা, দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনার জন্যও ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার রেওয়াজ রয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি, ক্ষয়ক্ষতি আটকানো, আগাম প্রস্তুতি এবং ব্যবস্থাপনা গ্রহনের জন্যও নামকরণ করা দরকার হয়ে পড়ে। এক কথায়, সকলে যাতে সহজে বুঝতে পারেন এটা একটা ঘূর্ণিঝড়, তাই নামকরণের রীতি রয়েছে।
এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নে। কারা কারা এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেন? গ্রীষ্ণকালীন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের একটি আদর্শ নিয়ম অনুসরণ করা হয়। সেই মতোই বেছে নেওয়া হয় একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম। আপনাদের জানিয়ে রাথি, ইংরেজি Q, U, X, Y, Z-এই পাঁচটি অক্ষর বাদ দিয়েই কোনও ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এভাবে আগামী ৬ বছরের জন্য একত্রে অনেকগুলো নাম নির্ধারণ করে রাখা হয়। যাতে এক বছরে একাধিক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে, তাহলেও কোনও সমস্যা না হয়। গোটা পৃথিবীর মতোই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ করে রাষ্ট্রসংঘের অধীনে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ডব্লিউএমও। এই সংস্থার অধীনে রয়েছে ১৮৫টি দেশ। পাশাপাশি রয়েছে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন এসক্যাপ (ESCAP)। তবে ১৯৭২ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা এবং দুর্যোগ প্রশমনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ডব্লিউএমও আলাদা একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সদস্য দেশ হল আটটি। সেগুলি হল, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান। ফলে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ এই আটটি সদস্যদেশ ঠিক করছিল। যেমন সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রেমালের নাম দিয়েছে ওমান। তবে ২০১৮ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের কমিটিতে যুক্ত করা হয় আরও কয়েকটি দেশকে। সেগুলি হল ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেন। ফলে এখন পিটিসি সদস্য দেশের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩টি। আপনাদের জানিয়ে রাখি, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে পিটিসি সদস্যভূক্ত দেশগুলি মোট ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে রেখেছে।
Discussion about this post