বাঙালিদের প্রিয় ভ্রমণের স্থান হলো দার্জিলিং। একটু পাহাড়, একটু হিমের ছোঁয়া চাইলেই প্রথমেই মাথায় আসে দার্জিলিংয়ের কথা। কিন্তু দার্জিলিং এখন হয়ে উঠেছে কংক্রিটের বন। দার্জিলিংয়ে গেলে ও দার্জিলিং থেকে অদূরে কোনো মনোরম, প্রাকৃতিক জায়গা খোঁজেন তারা। তাদের জন্য দার্জিলিংয়ের অদূরে অপেক্ষা করছে, কালেজ ভ্যালি।
গরমে উত্তরবঙ্গ যেতে অনেকেরই মন করে। তবে চা বাগান যেনো অন্য প্রশান্তি। যতদূরই চোখ যায় শুধুই সবুজ। অন্যদিকে বাঙালিদের চায়ের সাথে সাথে চা বাগানের প্রতিও একটি নিবিড় টান থাকে। তাই দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চা বাগান ঘেরা কা ভ্যালি বাঙালি পর্যটকদের কাছে একটি অন্য আকর্ষণ। শুধু ভারতীয় বাঙালিরাই নয়, দেশ – বিদেশ থেকে প্রতি বছর বাঙালি অবাঙালি অসংখ্য পর্যটক আসেন এই পর্যটন কেন্দ্রে।
যারা পাহাড় বেশি পছন্দ করে, মন খারাপ হলে যাদের মন পাহাড় ও সবুজ মনোরম পরিবেশে যেতে ইচ্ছা করে তারা একটা সময় করে ঘুরে আসতেই পারেন কালেজ ভ্যালিতে। প্রথমে এই অঞ্চলের নাম ছিল কালিজ। পরে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে হতে এখনের কালিজ ভ্যালি নামটি এসেছে। জানা যায়, এখানে চা বাগান বহু পুরনো। তাছাড়া কালিজ ফিজ্যান্ট পাখির থেকে এই অঞ্চলের নামকরণ করে রাখা হয়েছিল কালিজ।
ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে এই জায়গাটি বিশেষ আরামদায়ক হতে পারে। কারণ এর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানুষের কোলাহল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, তাছাড়া চা বাগানের অপূর্ব সৌন্দর্য্য এই অঞ্চলকে বিশেষ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এছাড়া পাহাড়ি ঝর্না ও দেখতে পাওয়া যাবে। যাকে বলা হয় ‘ইন্দ্রেনি ফলস ‘। এর অপূর্ব দৃশ্য আপনাকে মনোমুগ্ধকর করবে।
তবে পর্যটকরা বলেন, গরমের থেকেও বর্ষায় পর্যটন করলে কালেজ ভ্যালির সৌন্দর্য বেশি বোঝা যায়। কারণ, বর্ষাতে মেঘে ঢাকা পাহাড়, রোদ – বৃষ্টির খেলা, পাহাড়ি নদী, বৃষ্টিতে ভেজা বিস্তীর্ণ চা বাগান, পাহাড়ি ঝর্ণা বেশি বোঝা যায়। জানা যায়, বর্ষাতে বিভিন্ন রকমের পাখির মেলা বসে চা বাগানে।প্রকৃতির রং তখন অপরূপ হয়ে ওঠে, বৃষ্টির পর হালকা রোদে কলতান করতে থাকে ছোট ছোট পাখিরা। মেঘ সরে গিয়ে সবুজ পথের বাঁকে সরু পথের রেখা দেখা যায়। পাহাড়ি চা গাছ জলের ছোঁয়া পেয়ে আরো সবুজ, সতেজ হয়ে ওঠে। বৃষ্টির ফাঁকে পড়ন্ত বিকেলে আকাশে দেখা যায় রামধনু।অন্যদিকে, ঝর্নার কথায় যদি আসা যায় তাহলে বর্ষাতে সে হয়ে ওঠে পূর্ণযৌবনা।
থাকার জায়গা
কালেজ ভ্যালি ২ – ৩ দিনে ঘুরে নেওয়া যায়। তবে পাহাড়ি গ্রামের মধ্যে ও আপনি জিও সিমের পরিষেবা পাবেন।তাছাড়া হোম স্টে তে ওয়াইফাই পরিষেবা পেয়ে যাবেন। গোটা কালেজ ভ্যালি জুড়ে অসংখ্য হোম স্টে এবং ছোট ছোট থাকার জায়গা আছে। ফলে হাতে যদি আপনি ১ সপ্তাহ সময় নিয়ে আসেন তাহলে নিশ্চিন্তে ঘুরে নিয়ে পারেন কালেজ ভ্যালি সহ, এর আগে পাশে আরো কয়েকটি মনোরম, আকর্ষণীয় স্থানে।যেমন, দার্জিলিং, রঙ্গারুন, সোনাদা, তাকদা এই সব জায়গায়।
হোম স্টে গুলি খুবই মনোরম পরিবেশের মধ্যেই অবস্থিত। ফলে আপনি রুমে বসেই প্রকৃতির স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন। হোম স্টে-র বারান্দায় বসে মেঘ – কুয়াশার খেলা দেখতে পারেন। চাইলে রুমে বসেই দেখতে দূরে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ দেখতে পারেন, রামধনুর আকাশ। পাখিদের কলতান ইত্যাদি শুনতে পারেন ।
কি ভাবে পৌঁছবেন কালেজ ভ্যালিতে ?
দার্জিলিং থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানটি। ফলে দার্জিলিং থেকে গাড়িতে করেই যেতে পারেন এখানে। কলেজ ভ্যালি থেকে ২ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত ‘ইন্দ্রানী ফলস ‘ সেখানে কেউ যেতে চাইলে গাড়িতে করে যেতে পারেন। তবে শেষ এক কিলোমিটার আপনাকে পায়ে হেঁটেই যেতে হবে, কারণ এর ঘন পাহাড়ি গাছে ঘেরা আঁকাবাঁকা রাস্তাতে গাড়ি ঠিকঠাক মতন যেতে পারেনা। ফলে সেই জায়গাটিতে আপনাকে পায়ে হেঁটেই পাহাড়ি এলাকার স্বাদ নিতে হবে।
Discussion about this post