দিন দিন একা থাকার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। ব্যস্ততা ভরা জীবনে নিজেকে সময় দেওয়াটা খুব প্রয়োজন। বিশেষ করে, একা ঘুরতে যান, নিজেকে একটু সময় দিন, একা নিজের সাথে নিঃসঙ্গ সময় কাটান, নিজেকে দামী গিফ্ট উপহার দিন, সপ্তাহের একটা দিন ছুটি পেলে সিনেমা দেখতে যেতেই পারেন। কেউ সময় দিচ্ছেনা! সিনেমা দেখা কিংবা কোথাও যাওয়ার সঙ্গী খুঁজে পাচ্ছে না ? নিজেকে নিজেই সময় দিন। ব্যস্ততা ভরা জীবনে আমরা সবার খেয়াল রাখতে গিয়ে, ঘরে-বাইরে সমান তালে কাজ করতে গিয়ে, নিজেকে সময় দিতেই ভুলে যাই। তার থেকে বেরিয়ে এসে একটু নিজের মতন সময় কাটাতে পারেন। আপনার পছন্দের পাহাড়, সমুদ্র, নীল আকাশ দেখতে পারেন। অনেকেই সময় পেলে একা বেরিয়ে পরেন ভ্রমণে একে ‘সোলো ট্রিপ’ বা একাকী ভ্রমণ বলে।তবে ‘সোলো ট্রিপ বা একলা ভ্রমণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতনতা নিয়েই বের হন । এর ফলে একাকী ভ্রমনের নিরাপত্তাহীনতাতেও ভুগতে হবেনা, আবার কোনো ঝামেলা ঝঞ্ঝাট ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন। প্রথমে দেখে নেওয়া দরকার যেখানে যাবেন সেখানে কাছাকাছি কোনো ভালো হোস্টেল কিংবা হোটেলের সুবিধা আছে কিনা। থাকলেও রাতে একা থাকার ছাড়পত্র আছে কিনা। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেই হোটেল কতটা নিরাপত্তাময় এইসব বিষয় আগে জেনে নেওয়া দরকার। তাছাড়া যেখানে ভ্রমণ করবেন সেই জায়গা কতটা নিরাপদ ভ্রমণের ক্ষেত্রে, পরিবহন ব্যবস্থা কতটা ভালো, এইসব দেখে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। বেশিরভাগ বাঙালিদের ‘সোলো ট্রিপ’-র জন্য ৩টি জায়গা খুবই জনপ্রিয়। দেখে নেওয়া যাক সেই জায়গা তিনটি সম্পর্কে বিস্তারিত।
কালিম্পং(পশ্চিমবঙ্গ)
‘ সোলো ট্রিপ’ যারা করবেন তাদের জন্য এই জায়গাটি একদম আদর্শ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরভারতে অবস্থিত পাহাড় ঘেরা এই শৈলশহরে অনেকেই একা একা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট গ্রামে ঘেরা কালিম্পং। পাহাড়ি গ্রাম গুলির মধ্যে উল্লেযোগ্য কয়েকটি হল কাফেরগাঁও, রামধুরা, চারখোল, কোলাখাম।
সমুদ্র, পাহাড়, ঝর্ণা, সবুজ গ্রাম, নিরিবিলি গ্রাম্য পরিবেশে চাইলে এখানে ট্রিপ করা যেতেই পারে। শৈল শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে থাকার জন্য হোমস্টে। হোমস্টের বারান্দায় বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পারবেন। তাছাড়া কালিম্পং পরিচিত শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির জন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির বেশিভাগই ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত। চীনের তিব্বত আগ্রাসন ও ভারত – চীন যুদ্ধের আগে পর্যন্ত এই শহর ছিল ভারত – তিব্বত বাণিজ্যদ্বার। মনোরম জলবায়ু জন্য এই স্থান পর্যটকদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার অর্কিড ও ফুল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কালিম্পং ভ্রমণের জন্য সব থেকে আদর্শ সময় হল, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি।
উদয়পুর (রাজস্থান)
রাজস্থানের সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ও হ্রদের নৌকো ভ্রমণের জন্য ‘সোলো ট্রিপে ‘ বেশির ভাগ মানুষই এখানে বেড়াতে যান। উদয়পুর শহরটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৫৫৯ সালে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে এই রাজ্যের। মুঘল সম্রাট আকবরের মেবার রাজ্য আক্রমণের পরিকল্পনা জানতে পেরে মেবারের মহারানা দ্বিতীয় উদয় সিং নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানী চিতোরগড় থেকে ১২০ কোনো দূরে আরাবল্লি পর্বতমালার বক্ষে এই রাজ্যের সূচনা করেন। সিটি প্যালেস, পিছোলা হ্রদ, জগ মন্দির-সহ পুরনো ‘হাভেলি’ বা বাড়ি ঘুরে নিতে পারেন। রাজস্থানি নাচ, গানও উপভোগ করতে পারেন। সাধারণত কম বেশি সব মাসেই এই রাজ্যে ভ্রমণ করার উপযুক্ত জন্য সময়।
ভারকালা (কেরল)
বিশেষ করে হেলে পড়া নারকেল গাছ, ও সমুদ্রের উচ্ছ্বাস দেখার জন্য বেশিরভাগ পর্যটকরা কেরলে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। সোলো ট্রিপের যাত্রীদের নিজেদের মতো করে সমুদ্র সৈকতে নিরিবিলি বসে থাকার জন্য আদর্শ। কেরলের গ্রাম্য কলহহীন পরিবেশে, জলপ্রপাত, সমুদ্র, পাহাড় তাছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ও আছে । আছে পিকনিক স্পট, স্মৃতি স্তম্ভ, তীর্থক্ষেত্র, ফোর্ট ও প্রাসাদ। এইসবের জন্য পর্যটকরা এই স্থানের প্রতি ভ্রমণে বেশি আকর্ষিত হন। তাছাড়া প্রতিটা বাঁকে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যকৃত উজ্জ্বলপ্রভা সবাইকে আকর্ষণ করে।
ম্যাকলয়েডগঞ্জ(হিমাচলপ্রদেশ)
পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দলাই লামা মন্দির, বৌদ্ধ মঠ, তিব্বতি খাবারের জন্য এই স্থান প্রসিদ্ধ। সোলো টিপে ঘুরে আসাই যায় হিমাচলপ্রদেশের ম্যাকলয়েডগঞ্জে। শান্ত এই শৈলশহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য হোস্টেল ও হোমস্টে। হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার ধর্মশালার একটি উপশহর হল ম্যাকলয়েডগঞ্জ। এই স্থানে বার্ষিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ভাগসু নামক ভগবান শিবের মন্দির রয়েছে।
Discussion about this post