রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশ এখন তদারকি সরকারের হাতে। কিন্তু তাও সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা হুমকির মুখে পড়ছেন বারবার। ভাঙচুর হয়েছে বহু মন্দির ও উপাসনালয়। এই আবহেই এবার দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশে দুর্গাপুজো বলতেই প্রথমেই যে নামটি সামনে আসে তা হল ঢাকেশ্বরী মন্দির। ৮০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই মন্দির ঘিরে রয়েছে অসংখ্য জনশ্রুতি। বলা হয় এই মন্দির বহু ইতিহাসের সাক্ষী, দেখেছে বহু উত্থান-পতন।
প্রচলিত বিশ্বাস, এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নামানুসারেই ঢাকা শহরের নামকরণ হয়েছে। কারণ দেবী ঢাকেশ্বরীই ঢাকার অধিষ্ঠার্থী দেবতা। ঢাকা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির হল ঢাকেশ্বরী। মনে করা হয় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ৮০০ বছরের আগে। রাজা বল্লাল সেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন সেই ১২ শতাব্দীতে। যদিও মূল মন্দির বহুবার আক্রান্ত হয়েছে, বহুবার ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। আবার নতুন করে নির্মান করা হয়েছে। এমনকি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমিও বেদখল হয়েছে। কিন্তু আজও স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসকদের আসার আগে এই অংশে রাজত্ব করতেন সেন বংশের রাজারা। মন্দির নির্মাণ নিয়ে দুটি গল্প প্রচলিত। একটি হল রাজা বিজয় সেনের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী পূণ্যস্নানের জন্য লাঙ্গলবন্দে গিয়েছিলেন। ফেরার পথেই তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। এই পুত্রই পরে বল্লাল সেন নামে গোটা বঙ্গদেশ শাসন করেন। সিংহাসন আরোহনের পর তিনি নিজের জন্মস্থানকে মহিমান্বিত করার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির নির্মান করান। যা ঢাকেশ্বরী মন্দির নামে খ্যাত। অপর গল্পটি হল বল্লাল সেন একবার দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। জঙ্গলের মধ্যে দেবীমূর্তি চাপা পড়ে আছে। স্বপ্নাদেশ পেয়েই তিনি সেই জঙ্গলে যান এবং মূর্তিটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। পরে মন্দির নির্মান করে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকেশ্বরী হলেন দেবী দুর্গার আদি শক্তির এক অবতার। তিনিই ঢাকা শহরের রক্ষাকর্তী।
ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে চারটি শিব মন্দির রয়েছে। জানা যায়, ১৬ শতকে রাজস্থানের মহারাজা মান সিং এই চারটি শিব মন্দির নির্মান করিয়েছিলেন। এই মন্দিরে দুটি সিংহদ্বার বা প্রধান ফটক রয়েছে। মূল ফটকের মুখোমুখী দেবীর অধিষ্ঠান। মূল মন্দিরে রয়েছে নাটমন্দির ও নহবতখানা। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে মন্দির চত্বরেই তৈরি করা হয় প্রশাসনিক ভবন, কর্মীদের বাসস্থান, সভাকক্ষ, লাইব্রেরি এবং মঞ্চ। এছাড়া রয়েছে অতিথিশালা। ঢাকেশ্বরী মন্দির দেবী সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম। প্রচলিত বিশ্বাস এখানে সতীর মুকুটের মণি পড়েছিল।
ঢাকেশ্বরী মন্দির বহুবার আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই মন্দিরের দখল নিয়ে গোলাবারুদ মজুত করেছিল। সেই কারণে এই মন্দির আর পাঁচটা পুরোনো মন্দিরের মতো নয়। ইট-বালি-সিমেন্টে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতি বছর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ঘটা করে দুর্গাপুজো করা হয়। প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে। এবার অবশ্য বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সাবধানতা অবলম্বন করছে মন্দির কমিটি।
Discussion about this post