বিদ্যুতের দাম বাবদ বাংলাদেশের থেকে ৭,২০০ কোটি টাকা পায় গৌতম আদানির সংস্থা আদানি পাওয়ার লিমিটেড। ভারতের সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আদানি পাওয়ার লিমিটেড ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চরম হুশিয়ারি দিয়ে দিয়েছে। জানা যাচ্ছে, আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে সমস্ত বকেয়া না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে না গৌতম আদানির সংস্থা। এটা হলে কার্যত অন্ধকারে ডুবতে পারে বাংলাদেশ।
২০২২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে চুক্তি হয়েছিল আদানি গ্রূপের সঙ্গে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে ভারত থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ পাঠায় আদানির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য আদানি গ্ৰুপ ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় একটি বিশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছে তারা। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে প্রতিদিন ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা। কিন্তু গত আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশে ডামাডোল সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে সরকারি কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পরে সহিংস গণ অভ্যুত্থানের জেরে গদিচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তিনি পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে আসেন।
এই রাজনৈতিক পালাবদলের পর বাংলাদেশে অনেক পট পরিবর্তন হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কও তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রূপের দেওয়া বিদ্যুতের বিশাল বিল বাকি পড়ে যায়। বকেয়া টাকা চেয়ে বেশ কয়েকটি চিঠিও দেয় আদানির সংস্থা। দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানির সংস্থাই। কিন্তু বকেয়া না পেয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাঁরা জানিয়েছিল, ওই সময়ের মধ্যে বকেয়া মেটাতে হবে। সেই সঙ্গে ১,৫০০ কোটির ‘লেটার অফ ক্রেডিট’-ও দিয়েছিল। কথা ছিল, সেই টাকা কৃষি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ‘লেটার অফ ক্রেডিট’ দিয়ে মেটানোর। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনে একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, লেটার অফ ক্রেডিটের মাধ্যমে সেই টাকা মেটায়নি বাংলাদেশ সরকার। এর জন্য, বাংলাদেশে বিদেশী মুদ্রার ঘাটতিকে দায়ী করা হয়েছে। ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি, এর ফলে ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুতের জোগান কমিয়েছে ঝাড়খণ্ডের ‘আদানি পাওয়ার’।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশে দিনের অনেকটা সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। সময় মতো বিদ্যুতের দাম মেটানো হচ্ছে না বলে সে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলি জ্বালানি ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে ভারত থেকে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুতের জোগান কমিয়ে দেওয়া। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ তাঁদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, চলতি মাসে প্রতিদিন ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর তরফে। অর্থাৎ অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ পাঠানো হচ্ছে। গণ অভ্যুত্থানের সময় সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খলার জন্য বাংলাদেশে বহু কলকারখানা বন্ধ ছিল। কিন্তু এবার সেগুলি ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। এই পরিস্থিতিতে আদানি গ্রূপের বকেয়া একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বাংলাদেশে। পুরোপুরি আঁধারে ডুবতে পারে বাংলাদেশ। সূত্রের খবর, মুহাম্মদ ইউনুসের সরকার আদানি গ্রূপের কাছে কিছুদিন সময় চেয়েছে বকেয়া মেটানোর জন্য। অত্যন্ত চাপে থাকা তদারকি সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে কোনও ভাবে আদানির সংস্থাকে যাতে রাজি করানো যায়। অপরদিকে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও উন্নত করতে সচেষ্ট হয়েছে তাঁরা।
Discussion about this post