আত্মনির্ভর ভারতে এখন যত চর্চা বন্দে ভারত ট্রেন নিয়ে। চেয়ার কার বন্দে ভারত এখন অতীত, বরং রেল ট্র্যাকে নামার জন্য তৈরি বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেন। ইতিমধ্যেই ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে বহু প্রতিক্ষিত বন্দে ভারত স্লিপার ভার্সানের। কিন্তু এর মধ্যেই নীরবে ভারতীয় রেল এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। সেটা হল হাইড্রোজেন ট্রেন। এবার জল দিয়েই চলবে আস্ত ট্রেন, লাগবে না ডিজেল বা ইলেকট্রিক। কি ভাবছেন, এটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে দেখতে থাকুন এই প্রতিবেদন।
খুব শীঘ্রই ভারতে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে আধুনিক প্রযু্ক্তির হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন। আগামী ডিসেম্বর মাসেই এই ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হতে চলেছে বলে রেল মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই হাইড্রোজেন চালিত ইঞ্জিন তৈরি হয়ে গিয়েছে। যা চালানোর জন্য প্রতি ঘন্টায় ৪০ হাজার লিটার জলের প্রয়োজন পড়বে। তাই সেই রুটে জলের সরবরাহ যাতে ঠিকঠাক থাকে এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। সবদিক ঠিকঠাক থাকলে শুরু হয়ে যাবে ট্রায়াল রান। হাইড্রোজেন ট্রেন চালানোর জন্য আলাদা করে জলধারণ ইউনিট তৈরি করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি রুটে।
কীভাবে চলবে হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন?
অত্যাধুনিক হাইড্রোজেন ফুয়েল প্রযুক্তির দ্বারা চালিত এই ট্রেনের ইঞ্জিনে হাইড্রোজেন ফুয়েল ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। যেটি ফুয়েল সেল দ্বারা শুধুমাত্র জল থেকেই হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন তৈরি করবে। সেই হাইড্রোজেনের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি হবে, আর তা দিয়ে চলবে ট্রেন। এই প্রক্রিয়ায় বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে বের হবে বাষ্প এবং জল। এই প্রযুক্তিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই হাইড্রোজেন ফুয়েল ট্যাঙ্ক। যে হেতু শুধুমাত্র জল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তাই ডিজেল বা ইলেকট্রিক চালিত ইঞ্জিনের তুলনায় এর খরচ অনেকটাই কম হবে।
কত খরচ পড়বে একেকটি ইঞ্জিনে?
রেলওয়ে আধিকারিকদের দাবি, একটি হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরি করতে কমপক্ষে ৮০ কোটি টাকা খরচ পড়বে। ফলে অন্যান্য ইঞ্জিনের তুলনায় খরচ একটু বেশি। তবে একবার চালু হলে এই ইঞ্জিনের পিছনে খরচ নামমাত্র। ফলে সার্বিকভাবে রেলের খরচ কমবে। এই ভাবনা থেকেই এই ধরনের আরও ৩৫টি ট্রেন তৈরি করার চিন্তাভাবনা রয়েছে রেলের। এতএব আগামী দিনে হাইড্রোজেন ট্রেনের জন্য রেলের বাজেট বাড়ানো হতে পারে মনে করা হচ্ছে।
হাইড্রোজেন ট্রেনের গতি কত হতে পারে?
শুধুমাত্র জল দিয়ে চলা ট্রেনের গতি একেবারে কম হবে যদি মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। অত্যাধুনিক এই হাইড্রোজেন ট্রেনের গতি কিন্তু বন্দে ভারতকেও টেক্কা দেবে। রেল জানিয়েছে, একভাবে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে ১ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারবে এই হাইড্রোজেন ট্রেন।
কোন রুটে চালানো হবে এই হাইড্রোজেন ট্রেন?
আপাতত ঠিক হয়েছে দেশের প্রথম হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন চালু হবে হরিয়ানায়। পরীক্ষামূলকভাবে হরিয়ানার জিন্দ-সোনিপত রুটে এই পরিবেশবান্ধব ট্রেনের যাত্রা শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে তা চালু হলেও, পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাইড্রোজেন ট্রেন পরিষেবা শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। আগামীদিনে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে, কালকা-শিমলা রেলওয়ের মতো দেশের অন্যান্য পাহাড়ি এবং দুর্গম রেলপথে এই ধরনের ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেল মন্ত্রক।
Discussion about this post