এর আগে কলকাতা থেকে জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা সরাসরি পুলিশের ব্যর্থতার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছিলেন। তবে তা ছিল অনেকটাই নিজেদের পিঠ বাঁচাতে। তবে ইদানিং তৃণমূলের প্রথমসারির নেতাদেরও পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলতে বেশি দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এটা কার্যত সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তোলার সামিল। কারণ, এই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন একাধারে মুখ্যমন্ত্রী, তেমনই স্বরাষ্ট্র বা পুলিশ দফতর ও স্বাস্থ্য দফতরও তাঁরই অধীনে রয়েছে। ফলে পুলিশের ব্যর্থতার দায় মুখ্যমন্ত্রীর উপর বর্তায় বৈকি। তবে এবার ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর যা দাবি করলেন, তাতে বঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপ কয়েকগুন বাড়িয়ে দিল। তাঁর মন্তব্য, “ফুলটাইমের একজন পুলিশমন্ত্রী থাকলে, আমার মনে হয়, তাঁর নজর এড়িয়ে কোনও অপরাধ সংগঠিত হবে না”। এর অর্থ, মুখ্যমন্ত্রীর হাতে স্বরাষ্ট্র দফতর না থাকাই ভালো। যদিও হুমায়ুন কবীর যুক্তি দিয়েছেন, “অনেক সময়ে সিএম এত ব্যস্ত থাকেন, আমরা ইচ্ছা করলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। নিজেদের আবেদন নিবেদন সময় মতো পৌঁছতে পারি না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকটা দায়িত্ব নিয়ে নিলে, বাংলার মানুষ অনেকটা উপকৃত হবেন”।
সম্প্রতি আর জি কর কাণ্ডের পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি রাজ্যে ফুলটাইম পুলিশমন্ত্রীর দাবি তুলেছিল। বিরোধীদের দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রী একাধিক দফতর সামলান। ফলে স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে প্রয়োজন। উল্লেখ্য, আর জি কর ইস্যুতে রাজ্য সরকার, কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে রাজ্য সরকার বিড়ম্বনায় পড়েছিল। এবার তৃণমূলের অন্দর থেকেও একই দাবি উঠতে শুরু করেছে। হুমায়ুন কবীর একা নন, কয়েকদিন আগেই সৌগত রায়ের মতো বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদও পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন। আবার উত্তর ২৪ পরগণার তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য প্রশাসনে আনার দাবি তুলে শোড়গোল ফেলেছিলেন। বিরোধীদের কটাক্ষ. তৃণমূলের নবীন ও প্রবীনের দ্বন্দ্ব এই ব্যাপারে সামনে চলে আসছে। অপরদিকে, ২০২৬ সালের আগে দলের ভিতরেই যে ভাবে অভিষেককে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার যে দাবি উঠতে শুরু করেছে, তাতে চাপে পড়ছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশমন্ত্রী হিসাবে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা সামলাতে পারছেন না? হুমায়ুনের বক্তব্য আদতে বিরোধীদের দাবিকেই সমর্থন করছে। যা নিয়ে চরম অস্বস্তি তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। শাসকদলের একাংশের বক্তব্য, হুমায়ুন কবীর এই প্রথম কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করলেন না। এর আগে লোকসভা ভোটের সময় বহরমপুরে ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করায় বহিরাগত তত্ত্ব খাঁড়া করে বিরোধ করেছিলেন হুমায়ুন কবীর। পরে অভিষেকের দৌতে তিনি পাঠানের হয়ে প্রচার করেন। এবার তিনি অভিষেকের হয়েই সাওয়াল করলেন। এমনকি অভিষেককে মমতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দাবি করে বসলেন। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তৃণমূলের অন্দরে যে ভাবে অভিষেকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাতে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই মমতার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে প্রমোদ গুণছেন দলেরই একাংশ, বলা ভালো প্রবীনপন্থীরা।
Discussion about this post