বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর লাগাতার আক্রমণ, হিন্দু নেতা, সন্ন্যাসী ও সাধুদের গ্রেফতার। তাঁদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট ফ্রিজ করা, একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে বাংলাদেশে। আর তা ঘটছে বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকারের নির্দেশেই। ভারত সরকার, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশকে অনুরোধ, সতর্ক করলেও, সরাসরি বড় কোনও পদক্ষেপ করেনি। উল্টে বাংলাদেশ কড়া বিবৃতি জারি করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁরা ভারতকে পাত্তা দিতে নারাজ। উল্টে এখনও ভারতের বিরোধিতা করাই তাঁদের কাছে প্রধান লক্ষ্য, সেটা বোঝানো হচ্ছে। এখন প্রশ্ন, যে নরেন্দ্র মোদির সরকার, পাকিস্তানে একাধিক স্ট্রাইক করেছে তাঁরা, কেন বাংলাদেশ নিয়ে নিশ্চুপ? তবে কি এবার বড় কোনও পদক্ষেপের পথে ভারত? শুক্রবার তিনটি ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে জরুরি বৈঠক। দ্বিতীয়টি হল, রাজ্যসভায় ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, ও পরে বিদেশসচিব বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তৃতীয়টি হল, বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টার ভারত সম্পর্কে কড়া মন্তব্য। সবমিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েনের ইঙ্গিত অব্যাহত।
প্রথমেই বুঝতে হবে বাংলাদেশ কি চায়? ভারতের দুই পড়শি দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ফারাক বিস্তর। পাকিস্তান প্রথম থেকেই ঘোষিতভাবে ভারত বিদ্বেষী। আর বাংলাদেশের মধ্যে সদ্য ভারত বিদ্বেষী মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ, শেখ হাসিনা তো বটেই, এর আগে খালেদা জিয়ার আমলেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে অবনতি লক্ষ্য করা যায়নি। যা মুহাম্মদ ইউনুসের আমলে ভীষণভাবে প্রকট। ফলে বাংলাদেশ ইস্যুতে অনেকটাই বিভ্রান্ত ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এই উদ্ভুত পরিস্থিতির আঁচ একেবারেই টের পায়নি ভারতের গুপ্তচর বা গোয়েন্দা বিভাগগুলি। যেটাকে একটা বড় ব্যর্থতা বা ইনটালিজেন্স ফেলিওর হিসেবে দেখা যায়। ফলে আগাম খবর না রাখার ফল ভুগতে হচ্ছে ভারতকে। তাই, নতুন করে রণকৌশল স্থির করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে ভারতকে। বলা ভালো, পাকিস্তান সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা। তাই সে দেশে কি ঘটছে, কি ঘটতে পারে তার খবর থাকে নয়া দিল্লির নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকে। সেই অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। যেমন ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক করেছিল।
তার আগে ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল। প্রতিটি ঘটনায় ভারতীয় সেনা সে দেশের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে গুঁড়িয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এরকম কোনও ঘটনা ঘটনো সম্ভব নয়। তবে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করতেই পারে। অর্থাৎ, ভারত থেকে চাল, গম, কাঁচা আনাজ, বিদ্যুতের মতো জরুরি পণ্যের বাণিজ্য বন্ধ করতেই পারে ভারত। পাকিস্তানের মতো, হাতে মারা নয়, বাংলাদেশকে ভাতে মারতে পারে ভারত। অর্থাৎ, ভারত যদি, বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সে দেশে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়বে ইউনূস প্রশাসন এবং ছাত্রনেতাদের উপর। আবার কাউন্টার ইনটালিজেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে আওয়ামী লিগকে মদত দিয়ে, নতুন করে ইউনূস প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পারে ভারত। যা কার্যত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সমান হবে।
Discussion about this post