১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমানের বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় সেনার প্রথম ট্যাঙ্কটি প্রবেশ করেছিল। সেই সময় বাংলাদেশের অপামর মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। কারণ তাঁরা রেডিও মারফৎ খবর পেয়ে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতীয় সাঁজোয়া বাহিনী পাঠাচ্ছেন। ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাহিনী ভারতের সাহায্যে অনেক আগে থেকেই লড়াই করেছিল। কিন্তু ভারত সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৩ ডিসেম্বর যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এবং ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে দেশে ফিরে আসে ভারতীয় সেনা।
সে দিনের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ভারতীয় সৈনিক সমরেন্দ্র কুমার মণ্ডল। বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা শহরের মিশন এলাকায়। বর্তমানে বয়েসের ভারে ন্যুজ হলেও স্মৃতির ভাঁড়ারে আজও উজ্জ্বল সে দিনের মুক্তিযুদ্ধ। নিজেকে যেমন ভারতের প্রাক্তন সৈনিক হিসেবে দেখেন, তেমনই সমানভাবে নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধাও মনে করেন। ফলে আজ যখন তাঁদের হাতে গড়া স্বাধীন বাংলাদেশে দেখছেন ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেখানকার ছাত্ররা ভারতের জাতীয় পতাকা পা দিয়ে মারিয়ে যাচ্ছেন, সেটা আর মেনে নিতে পারছেন না প্রাক্তন সৈনিক সমরেন্দ্র কুমার মণ্ডল। এই বৃদ্ধ বয়েসেও অশক্ত শরীরে তিনি ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী প্রাক্তন এই ভারতীয় সৈনিক বংশ পরম্পরায় খ্রিস্টান। মাত্র ২২ বছর বয়েসে তিনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়তে। সেই বাংলাদেশেই এখন সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানরা আক্রান্ত। লাগাতার তাঁরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। যা নিয়ে সরব ভারত-সহ বিশ্বের বহু দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের ইউনূস সরকার সে সব পাত্তা দিতে নারাজ। এই বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন প্রাক্তন এই সৈনিক। তাঁর প্রশ্ন, মুহাম্মদ ইউনূস কী করছেন, কেন তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে রাষ্ট্রধর্ম পালন করতে পারছেন না? বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড দেখে তিনি যেমন তাজ্জব হয়ে যাচ্ছেন। তেমনই অতীত মনে করে ক্ষোভে ফুঁসছেন। ওপার বাংলায় ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার ছবি দেখে চোখে নামছে জলের ধারা। বৃদ্ধের কথায়, যে দেশ টাকে ভারতীয় সৈনিকরা জীবন দিয়ে স্বাধীন করেছিলেন, সেই দেশ ভারতের সাহায্যের কথা ভুলে গেল। কৃতজ্ঞতার বদলে জঘন্য থেকে জঘন্যতম কাজ করছে ওরা।
Discussion about this post