বাণিজ্য থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শিল্প, সব ক্ষেত্রেই এখন পাকিস্তানের মুখাপেক্ষী হতে চাইছে বাংলাদেশের ইউনূস বাহিনী। এবার সামরিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের সঙ্গে খুলে আম গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে বাংলাদেশ। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই প্রথম, বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। প্রায় ৫৩ বছর পর বাংলাদেশে ফিরছে পাক সেনা। নিশ্চই কৌতুহল হচ্ছে, কেন পাক সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ঢুকবে? জানা যাচ্ছে এবার বাংলাদেশি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে পাকিস্তানি সেনা কর্তারা। পাশাপাশি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নৌবাহিনী যৌথ মহড়ায় অংশগ্রহন করবে। যা সাম্প্রতিক সময়ের নিরিখে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
চলতি বছরের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতন এবং তাঁর ভারতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। যদিও ডিসেম্বরের শুরুতে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় গিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন বাংলাদেশের বিদেশসচিবের সঙ্গে। তাতে সম্পর্কের কঠিন বরফ কিছুটা হলেও গলতে শুরু করেছিল। কিন্তু বিগত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ ফের উল্টোদিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে কায়েরো শহরে গিয়েছিলেন। ওই বৈঠকের ফাঁকে তিনি আলাদা করে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে। বাংলাদেশি মিডিয়ার খবর, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে এই বৈঠকে অনেকগুলি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, শিল্প সম্ভাবনা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পারিস্পরিক সহযোগিতার মতো বিষয়। এখন জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিতে চায় পাকিস্তান। এর জন্য পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ সাহির শামশাদ মির্জা বাংলাদেশে সেনা অ্যাকাডেমিগুলিতে পাক সেনা লেকচারারদের পাঠাতে চান। যা মুহাম্মদ ইউনূস মেনে নিয়েছেন। ফলে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের সেনা একাডেমিগুলিতে পাক সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তাদের দেখা যাবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকেই পিছু হঠতে বাধ্য করেছিল বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা। শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে এই মুক্তিযোদ্ধাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারতীয় সেনারা। এমনকি তাঁদের যুদ্ধাস্ত্র দিয়েও সাহায্য করেছিল তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধির সরকার। পরে ভারত সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে। এবং এর পরেই পূর্ব পাকিস্তানের থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। সেবার জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনা আত্মসমর্পণ করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে। তার তাঁরা বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। সেই শেষ, তার পর আর কোনও কালেই বাংলাদেশের মাটিতে আর দেখা যায়নি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনও সদস্যকে। এবার সেই চিত্র বদলাতে চলেছে। ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যদি সরাসরি বাংলাদেশের সেনা একাডেমিতে ঢুকে পড়ে তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।
মহম্মদ ইউনুসের সরকার এই পথে হাঁটলে পাকিস্তানের প্রভাব–প্রতিপত্তি বাড়বে বাংলাদেশের ওপর। সেই সঙ্গে বাড়বে জঙ্গি কার্যকলাপও। অপরদিকে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নৌবাহিনী যৌথ মহড়ায় অংশগ্রহন করতে চলেছে বলে খবর। যা নিয়ে আলাদা উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে। কারণ ইতিমধ্যেই ভারত বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় নৌবহর বাড়িয়েছে। ভারতের একটি বিমানবাহী রণতরী ছাড়াও বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে মোতায়েন রয়েছে। ফলে কাছাকাছি যদি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নৌ মহড়া চলে তাহলে তা যে কোনও মুহূর্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। যদিও আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই তারপর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মাখামাখি কতটা থাকে, সেটা সময়ের অপেক্ষা।
Discussion about this post