বাংলাদেশে ক্রমাগত অরাজকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থতির জন্য আন্তর্জাতিক মহলে রোষের মুখে বাংলাদেশ। এবার চিনের সঙ্গে নতুনভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক করতে উদ্যোগী হয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধিন বাংলাদেশের তদারকি সরকার। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এনে ফেলেছে তাঁরা। এবার যার মাশুল দিতে হবে মুহাম্মদ ইউনূসকে, এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন যে বাংলাদেশের দিকে কড়া নজর রাখছে এবং তাঁরা ইউনূস প্রশাসনকে সাবধানও করে চলেছে সেটা এখন দিনের আলোর মতো পরিস্কার। সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চালাচ্ছে সে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে। তিনি আরও জানান, যে কোনও ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না। তবে মার্কিন প্রশাসন চেষ্টা করছে মুখোমুখি আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে সেটা বোঝা গিয়েছিল তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত সফরকালে। তিনি চাছাছোলা ভাষায় বাংলাদেশে জঙ্গিরাজ্য হয়ে ওঠার বর্ননা দিয়ে নাম না করে মুহাম্মদ ইউনূসকে সতর্ক করেছিলেন। এরপর আমরা জেনেছি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কয়েকবার ফোন এসেছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধানের কাছে। এবার আচমকাই বাংলাদেশ সফরে এলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তা। জানা যাচ্ছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে বড় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে সেখানকার ক্যমান্ডান্ট লেফট্যানন্ট জেনারেল জোয়েল জেবি ভোয়েল ইতিমধ্যেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। তিনি কার আমন্ত্রণে ঢাকায় এলেন, নাকি হোয়াইট হাউসের নির্দেশে তিনি এসেছেন, সেটা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। কোনও পক্ষই এই বিষয়ে মুখ খোলেনি। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, তিনি এমন একটা সময়ে বাংলাদেশে এলেন যখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশেরই অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একের পর এক কুরুচিকর আক্রমণ নেমে আসছে। ফলে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরেই জন্মেছে ক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান পরপর দুদিন ধরে একাধিক বৈঠক করেছেন। সূত্রের খবর মঙ্গলবারও তিনি কয়েকটি বৈঠক করছেন। এই পরিস্থিতে উচ্চপদস্থ মার্কিন সামরিক কর্তার ঢাকায় আগমন যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ।
বিগত সাড়ে সাত মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ক্ষমতায় রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পরিবর্তনের মতো একটা গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছিল খবরের শিরোনামে। কিন্তু এর পর বাংলাদেশের মানুষের বেহাল দশা কি কেটেছে? যে স্বপ্ন নিয়ে, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছাত্ররা পথে নেমেছিল, সেই স্বপ্ন বা প্রতিশ্রুতি কোনওটাই কি পূরণ হয়েছে? উত্তর হল না। বাংলাদেশের উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রকাশ করা একটি রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, যেখানে ২০২২ সালে বাংলাদেশে দরিদ্রের হার ছিল ১৮.০৭ শতাংশ। যা এই ইউনূস আমলে এসে ঠেকেছে ২৩.১১ শতাংশে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, শহরাঞ্চলে দরিদ্রের হার আগে ছিল ১৪.৭ শতাংশ। যা ২০২৪ সালের শেষে এসে ঠেকেছে ২০.৪৩ শতাংশে। গ্রামেও হাল একই। সেখানে গত দু’বছরে দারিদ্রতা বেড়েছে ৪ শতাংশ। আগে ছিল ২০ শতাংশ। এখন হয়েছে ২৪ শতাংশ। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ছিল ৩৮ শতাংশ। যা ২০২৪ সালে পৌঁছে গিয়েছে ৪৬ শতাংশে। এতকিছুর পরও মুহাম্মদ ইউনূস পড়ে আছেন ভারত বিরোধী শক্তিগুলিকে উৎসাহিত করতে। যাদের ডানায় ভর করে তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছিলেন। ফলে বাংলাদেশে বেড়েছে জঙ্গি ও জিহাদি কার্যকলাপ। ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যেই মার্চ ফর খিলাফত মিছিল হচ্ছে। তাতে ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোঁর। তিনি মঙ্গলবার এক ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উল্লেথ করে ২০২৪-এর তথাকথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। টেনে আনেন শেখ হাসিনার শাসন এবং স্বৈরাচারের প্রসঙ্গ।
এবার ইউনূস যাচ্ছেন চিন সফরে। যা নিয়ে যেমন ভারতের মাথাব্যাথা, তেমনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। প্রধান উপদেষ্টার বেজিং সফরে বেশ কিছু ঘোষণা আসতে পারে বলে বাংলাদেশ সরকার ও চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জানা যাচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূস চীনে তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পাশাপাশি ব্যবসা ও বিনিয়োগ নিয়ে চারটি আলাদা বৈঠক করতে যাচ্ছেন। ২৮ মার্চ বেজিংয়ে শীর্ষ বৈঠকের পাশাপাশি দেশটির শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে ওই বৈঠকে তিস্তা-সহ বাংলাদেশের নদী প্রকল্প নিয়ে যে আলোচনা হতেই পারে সেটাও জানিয়েছে তদারকি সরকারের পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
ভারতের চিন্তা এখানেই। মুহাম্মদ ইউনূস সরকার যেনতেন প্রকারেণ চাইছে ভারতকে প্যাচে ফেলতে। সেই কারণেই তাঁরা চিনের সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ উঠিয়ে দিল। অপরদিকে আগামী মাসে থাইল্যান্ডে হতে চলা বিমস্টেকের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশ চাইছে, মোদি যেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কিন্তু ভারত যে তাঁদের গুরুত্বকে আমল দেয়নি সেটা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যেই পরিস্কার।
অশান্ত বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হবে বুধবার। তার আগেই চিন সফরে যাচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এর থেকেই পরিস্কার তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বা স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি প্রাধান্য দিতে চান ২৪-এর বিপ্লব এবং কট্টর ইসলামিক শক্তিগুলির চাহিদাকে। সেটা প্রতিহত করতেই কি উচ্চপদস্থ মার্কিন সামরিক কর্তার ঢাকায় আগমণ? কারণ, চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে সকলেই জানেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ভারতকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আরও বেকায়দায় পড়তে চলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
Discussion about this post