সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সংকট দুর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত বছর অভ্যত্থানের সময় থেকেই প্রশংসিত হয়েছেন সেনাপ্রধান। তবে যতদিন এগিয়েছে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগে উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। এমনকি তার ক্ষমতাত্র তো হওয়া সম্ভবনাও ছিল প্রবল। তবে সেই সময় ভারত সেনাপ্রধানের পাশে দাঁড়িয়ে তার পদ রক্ষা করতে সহায়তা করেছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই সে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সেনাপ্রধানের ওপর ভারতের একটি চাপ কাজ করছে সেই বিষয়টি স্পষ্ট।
বারবার সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নেননি। এটা বিশ্ব দরবারে যথেষ্ট প্রশংসা পেলেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই মেনে নিতে পারছেন না।সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য।
গত বছর বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয় শেখ হাসিনাকে। গঠিত হয় মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলো বাংলাদেশে।
তবে এখন সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়, হাসিনা পরবর্তী সময়ে দেশের নাগরিক কি পেলেন সেটা নিয়েই এখন ক্ষুব্ধ অধিকাংশ মানুষ। কারণ, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত খুন, মারধর, চুরি, ডাকাতি, নারী ও শিশু নিগ্রহ এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। যা থামানোর কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছে না মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। ফলে তাঁরা এখন সেনা শাসন চাইছেন।
কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সেনাশাসনের পথে যেতে নারাজ। তিনি শান্তি স্থাপন করতে চান। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যে দেশের সরকার ও উপদেষ্টারা এখন মধ্যযুগীয় ইসলামিক শাসনব্যবস্থার দিকে যেতে চাইছে, যে দেশে জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চল গড়ে উঠেছে। সেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কতটা কঠিন, সেটা রীতিমতো টের পাচ্ছেন সেনাপ্রধান। তিনি এখন নিজেই স্বীকার করছেন, যে কোনও সময় বাংলাদেশে বড় ধরণের নাশকতামূলক হামলা হতে পারে। আর এই খবর এসেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র থেকে। কিন্তু সেনাপ্রধান কেন নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিচ্ছেন না অথবা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করছেন না সেটাই এখন মূল ভাবার বিষয়। তবে একটা বিষয় পরিস্কার সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান এই পরিস্থিতিতে একটি টানাপোড়েনে পড়ে গিয়েছেন। কারণ তার উপরে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল চাপ, একদিকে ভারত অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
একদিকে যে ভারতীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে নিজের পদ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন সেনাপ্রধান সেই ভারত চাইছে দ্রুত ইউনুসকে সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ একটি সরকার আসুক। ফলে ওয়াকার উজ জামানের কাছে ভারতেরও প্রবল চাপ রয়েছে।
আবার, সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এক শীর্ষ সামরিক কর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভোয়েল। মার্কিন সেনাকর্তা ও তার দল শুধুমাত্র বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও অন্যান্য কয়েকজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে। এখন প্রশ্ন হল আচমকা কেন এই মার্কিন সেনাকর্তা বাংলাদেশ সফরে এলেন? জানা যাচ্ছে মার্কিন সেনা কর্তারাও ইউনুসকে হটানোর নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন সেনা প্রধানকে।
এখন দেখার এই দুই চাপ উপেক্ষা করার সাহস ও ক্ষমতা বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের কতটা আছে।
Discussion about this post