বাঙালির অতি প্ৰিয় পর্যটন গন্তব্য দীঘা পুরী ও দার্জিলিং। এরমধ্যে একমাত্র পুরী বাদে বাকি দুটি এই বাংলাতেই। এবার দিঘায় পুরীর ধাচে তৈরি হল জগন্নাথ মন্দির। সেটা উদ্বোধনের আগেই এক অলৌকিক কাণ্ড! সত্যিই কি অলৌকিক? মাত্র দুটো দিন ছুটি পেলেই নামমাত্র খরচে ঘুরে আসা যায় দীঘা। দিঘার সমুদ্র স্নান আর হুল্লোর ছিল দিঘার একমাত্র আকর্ষণ। সেখানে ওড়িশা পুরীতে সমুদ্র স্নান ছাড়াও রয়েছে জগন্নাথ ধামের আকর্ষণ। তাই পুরীতে প্রমোদ ভ্রমণ ছাড়াও তীর্থযাত্রার স্বাদ একত্রে পাওয়া যায়। এবার দিঘায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ও অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়ে গেল আস্ত একটি জগন্নাথ মন্দির। ঠিক পুরির জগন্নাথ মন্দিরের আদলেই তৈরি হয়েছে বিশাল এই মন্দিরটি। হলে এবার দীঘায় গিয়েও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবেন পর্যটকরা। দিন কয়েক পরেই উদ্বোধন করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এক অলৌকিক ঘটনা। স্থানীয়দের দাবি, সমুদ্র তটে ভেসে এসেছেন স্বয়ং জগন্নাথ দেব। ঠিক যেমন পুরীর মন্দিরের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। এটা কি সত্যিই অলৌকিক কোনও ঘটনা? নাকি পুরোটাই প্রচার পাওয়ার বাসনা? যা নিয়ে গোটা রাজ্যজুড়েই শুরু হয়েছে তর্ক ও বিতর্ক।
দিঘায় জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনের আগে এমনভাবে সমুদ্র থেকে জগন্নাথ দেবের কাঠের মূর্তি ভেসে আসা অনেকেই এক অলৌকিক ইঙ্গিত বা দৈব সংকেত বলে মনে করছেন। তবে বিরোধীরা আবার বলছেন এটা সস্তা প্রচার পাওয়ার জন্যই ঘটানো হয়েছে।
আসলে রবিবারই সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে এসেছেন স্বয়ং জগন্নাথদেব। প্রায় আড়াই ফুটের দারুমূর্তি, সুসজ্জিত। কাকতালীয়ভাবে দিঘাতেই তৈরি হচ্ছে তাঁর সুবিশাল জগন্নাথ মন্দির। উদ্বোধন হবে অক্ষয় তৃতীয়ায়। দিঘার মাইতিঘাটে ভেসে আসা ওই মূর্তি ঘিরে তাই বাড়ছে রহস্য। দিঘার মাইতি ঘাটেই নতুন ঘাট নির্মাণের কাজ চলছিল। সেই সময়েই হঠাৎ মিস্ত্রিদের চোখে পড়ে কাঠের জগন্নাথ মূর্তি। জল থেকে তুলে এনে মূর্তিটিকে পাড়ে নিয়ে আসেন তাঁরাই। লোকমুখে তা জানাজানি হতেই ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু কোথায় ঠাঁই হবে প্রভু জগন্নাথদেবের? বিকেল গড়িয়ে রাত হয়, শেষ পর্যন্ত সাহস করে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা অবনী সামন্ত। তিনিই জানিয়ে দেন, প্রভুকে তিনি নিজের বাড়ি নিয়ে যাবেন। এরপর তাঁর বাড়তেই নিয়ে যান অবনী।
অপরদিকে গত বুধবারই নবান্ন থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন মুখ্য়মন্ত্রী। নিরাপত্তা-সহ প্রতিটা বিষয় প্রশাসন তরফে আয়োজন করা হয়ে গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, উদ্বোধনের ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ ২৯ তারিখ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রভুর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। তারপর দিন ৩০ তারিখ দুপুর আড়াইটের সময় উদ্বোধন হবে মন্দিরের। ৩.১০ মিনিট নাগাদ হবে দ্বারোদ্ঘাটন। ঘোটা প্রক্রিয়ায় থাকবেন পুরীর রাজেশ দৈত্যাপতি। এখন প্রশ্ন হল, সমুদ্রে ভেসে আসা মূর্তিটি কি ঠাঁই পাবে নতুন মন্দিরে? সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি এই বিষয়ে। তবে বিরোধীদের বক্তব্য, সস্তা প্রচারের জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কারণ জগন্নাথের কাঠের মূর্তিটি একেবারেই তৈরি করা ও নতুন বলে মনে হচ্ছে। আসলে কেউ বা কারা ধর্মীয় ভাবাবেগ উস্কে দিতেই এই নাটক। বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, পুরীর মন্দির ঘিরে যে পৌরাণিক গল্প প্রচলিত, অনেকটা সেই ঢঙে দিঘায় মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে ভেসে এল সুসজ্জিত জগন্নাথের মূর্তি। এর পিছনে গভীর চক্রান্ত আছে বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। সরকার কি তদন্ত করবে?
Discussion about this post