ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রবলভাবে উত্তপ্ত হয়েছে। এর পরে প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে কে? আগুন লাগাচ্ছে কে? যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে বলেন, আরএসএস। অর্থাৎ আরএসএস এটার ইন্ধন যোগাচ্ছে, এটাই বলতে চান তিনি। বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, এটা জাতের লড়াই, ভাতের লড়াই নয়। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের জন্য নিশানা ঠিক করে রেখেছেন। আর সেই নিশানাটি হল আরএসএস। কিন্তু এর কারণটা কি?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় একটি খোলা চিঠি লিখেছেন রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে। তিনি শান্তির বাণী সামনে রেখছেন। অর্থাৎ তিনি ভালো করে বুঝে গিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের যে ঘটনা ঘটছে, যে হিংসা ছড়িয়েছে সেটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। আসা যাক তাঁর চিঠি নিয়ে। এতদিন এই ধরনের চিঠিতে কি কি লেখা হবে, কাকে দোষ দেওয়া হবে, কোনটা চেপে যাওয়া যাবে, সেটা ঠিক করত সরকারের আমলারা। তবে এখন সম্ভবত তৃণমূল কংগ্রেসের যে অ্যাইপাক রয়েছে, তাদের থেকে শুদ্ধ হয়ে আসে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে প্রসাসনিক থেকে রাজনৈতিক প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী লিখছেন, বিজেপি সহ তার সঙ্গীরা বাংলাতে বেশি আক্রমণাত্বক হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে আরএসএস ও রয়েছে। তিনি বলেন, আরএসএস এর নাম এর আগে কখনও নিই নি। তবে এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গে যে মিথ্যে প্রচার চলছে, তার মূলে এরাও রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এইবারের বিজেপি নির্বাচনে নামছে হিন্দু ভোট ও হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করার বয়ানকে হাতিয়ার করে। এরপর মুর্শিদাবাদের ঘটনা সামনে আসতে বিজেপির আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই জায়গাতে আরএসএস এর নাম ধরে বলা মুখ্যমন্ত্রীর। অর্থ তিনি বুঝতে পারছেন, শুধুমাত্র বিজেপি নয়, আরএসএস এর সঙ্গে থাকবে। যারা ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বিস্তার করছে।
ফলে এতদিন মুখ্যমন্ত্রী তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখলেও এখন সেটা আর সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে দেখলে দেখা যাবে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, যেখানে যেখানে বিজেপি প্রভাব বিস্তর করতে পেরেছে, সেখানে বিজেপি আরএসএসকে নিয়ে করেছে। এই রাজ্যে বিজেপি অনেক আগেই চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিজেপি এবং আরএসএসের মধ্যে মনোমালিন্যেরে সেটা সম্ভব হয়নি। এবং মুর্শিদাবাদের এই ঘটনায় আরএসএস এবং বিজেপি যে এক সঙ্গে তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে নামতে পারে, সেটার বিষয়ে ওয়াকিবাহুল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুদিন আগেই আরএসএসের প্রধান মোহন ভগবৎ পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। তার সফরটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। যাতে সংঘের প্রচার হয়, তারই এই বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন মোহন ভাগবত। এই জায়গায় একটা প্রশ্ন উঠেই, এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কতটা বেড়ে উঠেছে আরএসএস? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, কিছুদিন আগে পর্যন্ত আরএসএসকে পশ্চিমবঙ্গে খুঁজে পাওয়া যেত না।
কিন্তু এখন তাদের বিস্তার লক্ষ্যণীয়। এমনকি মুর্শিদাবাদের ঘটনায় শান্তি বজায় রেখে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে খোলা চিঠির মাধ্যমে বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরএসএসের কথা তুলে ধরেছেন। এমনকি সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি আরএসএস এর প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। আর এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি এবং আরএসএস এর মধ্যে যদি কোন সংখ্যার থেকে থাকে তবে তা প্রশমিত করা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা চিঠির মাধ্যমে একটি রাজনৈতিকভাবে স্ট্যান্ড নিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি শুধু বিজেপি নয়, আরএসএস এর বিরুদ্ধেও যে লড়াই করছেন সেটা ঠারেভরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন দেখার, যারা চান না বিজেপি ক্ষমতায় আসুক বা আরএসএসের হাতে ক্ষমতা চলে যাক, তারা মুখ্যমন্ত্রীর এই খোলার চিঠির মাধ্যমে তাদের ভোট ধরে রাখতে পারেন কিনা এবং পাশাপাশি বিজেপি এবং আরএসএসের সমন্বয়ে পশ্চিমবঙ্গে আরও শক্তিশালী হয় কিনা।
Discussion about this post