ব্রিগেড ডাকলে ভরে যায়, কিন্তু বুথে এজেন্ট পাওয়া যায় না কেন? সিপিএম নেতা-নেত্রীদের মনে এই প্রশ্ন প্রায় এক দশক ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এবারের ব্রিগেডেও লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হল। তাহলে কি শূন্য বামেরা এবার ষোলকলা পূর্ণ করতে পারবে? রবিবারের ব্রিগেডে সেই আগের মতোই ভিড়ের শক্তি দেখাল সিপিএম। যদিও সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশ আটকাতে রাজ্য সরকারের তরফে সব রকম প্রচেষ্টাই হয়েছে। যেমন হাওড়ায় বিনা নোটিশে বন্ধ হল ফেরিঘাট। ব্রিগেড ময়দানে কোনও পুলিশি ব্যবস্থা ছিল না, নেই কোনও ভলেন্টিয়ারি প্রসেসও। রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকেও তীব্র দাবদাহের জন্য নেই কোনও ছাউনির ব্যবস্থা বা মেডিকেল ক্যাম্প। যা তৃণমূলের যে কোনও সমাবেশেই দেখা যায়। তবুও বামেদের ব্রিগেডে দেখা গেল লক্ষ মানুষের সমাগম।
সিপিএম নেতাদের বক্তব্য পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবারের ব্রিগেড সমাবেশ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মাঠের এই ব্রিগেডকে কি বুথের ব্রিগেডে পরিণত করতে পারবেন বাম নেতারা? নাকি শূন্যে থাকা বামফ্রন্ট সেই শূন্যেই ঝুলে থাকবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে।
এর আগে ইনসাফ যাত্রা করেছিল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। পরে হিসেব নিকেশ করে ডিওয়াইএফআই জানিয়েছিল ৫০ দিনের ওই ইনসাফ যাত্রায় মোট ১২ লক্ষের বেশি মানুষ সামিল হয়েছিলেন। এবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বামফ্রন্টের শ্রমিক-কৃষক সমাবেশেও দেখা গেল প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড়। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, যে দলের বাংলায় একটিও বিধানসভা বা লোকসভা আসন নেই, তাদের কাছে এই জমায়েত যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। সভা শেষ করে বাম নেতারাও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। কিন্তু নিচুতলার কর্মীদের সুর কিন্তু অন্য। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত বিশাল এই বাংলায় ব্রিগেডের ভিড় কি বুথ পর্যন্ত নিয়ে আসা যাবে? না হলে তো সেই শূন্যেই থাকতে হবে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ যেমন তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর মতামত প্রদান করেছেন।
বরাবরের মতোই কটাক্ষের সূরে তিনি লেখেন, “আবার বলছি, যাঁরা আজ সিপিএমের ব্রিগেডে যাবেন, বড় বড় কথা বলবেন, তাঁরা ৯৯ শতাংশই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, দিচ্ছেন। সভায় সামান্য কিছু লোক দেখানোটা বড় কথা নয়, এঁরাই ফিরে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দেন। আগেও একাধিকবার এটা ভোটের অঙ্কে প্রমাণিত। ফলে, আজকের ছবির ক্যাপশন: মঞ্চ সিপিএমের, ভোটার বিজেপির। এটা মুখোশধারী রামবামের ব্রিগেড”। কুণালের এই পোস্টে অনেকেই কটাক্ষ করেছেন। একজন লিখেছেন, প্রত্যেকবার ভোটের আগে বলেন সিপিএম শূন্য, তবুও আপনার সিপিএমের ভূত দেখা বন্ধ হবে না। যদিও সিপিএম যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা টি-২০ নয়। আমরা টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছি”।
অর্থাৎ, বামফ্রন্টের নবীন প্রজন্মও স্বীকার করে নিচ্ছেন, এখনও অনেক সময় লাগবে ক্ষত মেরামত করতে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সিপিএমের নিচুতলার অনেকের ক্ষোভ রয়েছে মাঝারি মাপের নেতাদের বিরুদ্ধে আবার শাখাস্তরের বহু নেতা বা দলীয় কর্মীরা এখনও নিস্কৃয় রয়েছেন। তাই প্রতিটি বুথে এজেন্টই দিতে পারছে না সিপিএম। পাশাপাশি বামফ্রন্টের শরীক দলগুলিও প্রায় নিষ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ফলে যা লড়াই লড়তে হচ্ছে একা সিপিএমকে। তবে এবারের ব্রিগেডের একটা ছবি কিন্তু গেম চেঞ্জার হতেই পারে। তা হল, মঞ্চের নীচে বসে সবার ভাষণ শুনলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। আর মঞ্চে দলের নেতা হিসেবে রইলেন সেলিম এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা-নেত্রীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এটার পাশাপাশি এবারের ব্রিগেডে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী-সহ একেবারে প্রান্তিক অংশের মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। যা সিপিএমের কাছে আশাব্যঞ্জক হতেই পারে ছাব্বিশের নির্বাচনে।
Discussion about this post