গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীর উপত্যকার বৈশরণ ভ্যালিতে ঘটে গিয়েছিল বিগত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৭ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষ। বেছে বেছে তাদের হত্যা করা হয়েছিল রীতিমতো চিহ্নিত করে। যা ভারতের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করার জন্য যথেষ্ট ছিল। গত ২২ এপ্রিলের পর থেকে ভারত সরকার যাবতীয় অভিযোগ পাকিস্তানের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। এর কারণ এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল লসকার-ই-তৈবার একটি ছায়া সংগঠন। কিন্তু এনআইএ তদন্ত যত এগিয়েছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে পাক যোগ। তাই ভারত যে খুব শীঘ্রই একটা বড় সামরিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে সেটা খুব পরিষ্কার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পহেলগাঁও হামলার এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও কেন ভারত কোনও সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি, অথবা ভারত কেন এত সময় নিচ্ছে? যদি আপনার বাড়িতে কোন বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান থাকে তাহলে তার প্রস্তুতিতে কতটা দিন সময় লাগতে পারে?
ফলে ভারত পাকিস্তানকে কেন এত তাড়াতাড়ি আক্রমণ করছে না তার জবাব এই প্রশ্নের উত্তরই পেয়ে যাবেন। আসলে সব কিছুর জন্যই একটা বাড়তি প্রস্তুতির সময় লাগে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিগত কয়েকদিন ধরে একটানা বৈঠক করে চলেছেন। তিনি যেমন একাধারে বৈঠক করছেন ভারতের তিন সেনাপ্রধানের সঙ্গে, তেমনি বৈঠক করছেন প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গেও। পাশাপাশি বৈঠক করছেন ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি, রাজনৈতিক ক্যাবিনেটেড কমিটি বা অর্থনৈতিক ক্যাবিনেট কমিটির সঙ্গেও। অপরদিকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইউরোপ ও আমেরিকার একের পর এক রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে চলেছেন। অর্থাৎ যে কোন সামরিক অভিযানের আগে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার পর্ব চলছে ভারতে।
প্রতিবারই দেখা গিয়েছে পাকিস্তান ভারতের এই সামরিক প্রস্তুতির মধ্যে পরমাণু হাতিয়ার প্রয়োগের হুমকি দিয়ে চলেছে ক্রমাগত। এটা কিভাবে প্রতিহত করা যায় সেটাও ভারতের মাথায় রয়েছে। কারণ পরমাণু হাতিয়ার প্রয়োগ করা অত সহজ ব্যাপার নয়। ইতিমধ্যেই রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে ইউরোপীয় দেশগুলোও ভারতের পাশে আছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে একথা মেনে নেওয়া বোকামীর সামিল। সেই কারণেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ক্রমাগত ইউরোপীয় দেশ গুলির সঙ্গে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা , জয়শঙ্কর সম্প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলোকে যে বার্তা দিয়েছে তাতে পরিষ্কার ভারত পাকিস্তানের উপর সামরিক অভিযান চালাবে। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলি যেভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন জুগিয়েছে ভারত কেউ যেমন সেভাবে সমর্থন জোগায়, সেটা নিশ্চিন্ত করার চেষ্টা করেছেন।
এর সঙ্গে বলে রাখা ভালো, ভালো যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে তাহলে পাকিস্তানও ছেড়ে কথা বলবে না এটা বলাই বাহুল্য। তাই পাল্টা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঝালিয়ে নেওয়াটাও একটা বড় কারণ এই দেরি হওয়ার পেছনে। বিশেষ করে পাকিস্তান যখন এক পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং তারা ক্রমাগত হুমকি দিয়ে চলেছে। ৭ এপ্রিল ভারতের সাতটি রাজ্যে সিভিল ডিফেন্স এর ওপর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করার মহড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যা যুদ্ধের চরম প্রস্তুতি গুলি মনে করা হতে পারে। একটি যুদ্ধ যখন বাঁধে, তখন দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা যেতে পারে। আমরা ধরেই নিচ্ছি সামরিক ক্ষেত্রে ভারত পাকিস্তানের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে। তবুও ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিলে হয় না। তাই সামরিক ব্যবস্থার পাশাপাশি ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি ঝালাই করে নেওয়া প্রয়োজন। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একের পর এক বৈঠক করে চলেছেন।
সবচেয়ে বেশি যে দিকটা ভাবতে হবে, সেটা হল অন্যান্য সীমান্ত। ভারত যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে এবং যুদ্ধ বাঁধে তবে ভারতের পূর্ব সীমান্ত অর্থাৎ বাংলাদেশ অথবা উত্তর সীমান্ত চীন যেন অলক্ষিত না থাকে। এই বিষয়টিও ভারতকে নজরে রাখতে হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতকে নজরে রাখতে হচ্ছে যাতে যত কম সংখ্যক সেনা জওয়ান বা আধিকারিকের প্রাণ সংশয় না ঘটিয়ে এই যুদ্ধ করা। সেই কারণে ভারতের প্রত্যাঘাত করতে একটু সময় লাগছে। সূত্রের খবর ভারত বাকি সব দিকেই প্রস্তুত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্থল, বায়ু এবং নৌসেনা পুরোদস্তুর তৈরি পাকিস্তানকে চরম আঘাত হানতে। ফলে এবার পাকিস্তান আগামী দিনে আর কোনও প্রত্যাঘাত করতে যাতে না পারে সে ব্যবস্থাই করতে চাইছে ভারত সরকার।
Discussion about this post