এসএসসি-র রঙ্গমঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। কারণ একদিকে চাকরিহারা গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের বিশেষ ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন, অন্যদিকে সেই রাজ্য সরকারের পুলিশই চাকরিহারাদের লাঠিপেটা করতে ছাড়ছে না। বিরোধীদের প্রশ্ন, এই প্রহসন আর কতদিন চলবে?
হকের দাবিতে বিকাশভবনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন চাকরিহারারা। প্রস্তুত ছিল বিধাননগর পুলিশও। প্রস্তুত রাখা ছিল ব্যারিকেড, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস। কিন্তু পুলিশের চেষ্টা বিফল করে সব বাধা টপকে বিকাশভবনের ‘দখল’ নিয়ে নিয়েছিলেন চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সল্টলেকের বিকাশ ভবন চত্বর। দীর্ঘদিন হকের দাবিতে অবস্থান, মিছিল আন্দোলন ও অনশনের পরও যখন সুরাহা হয়নি তখন তাঁদের ধৈর্ষের বাঁধ ভাঙছিল। এই আবহেই রাজ্য সরকার চাকরিহারা গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের জন্য বিশেষ ভাতা ঘোষণা করে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে এই ঘোষণা করেন। এরপরই ভাতা নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে দাবিতে বিকাশ ভবন অভিযান করেন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। কিন্তু তাতে তাঁদের কপালে জুটল পুলিশের বেধরক মার, পুলিশের লাঠি। কেউ আহত হলেন, কারও মাথা ফাটল আবার কারোও হাত-পা ভাঙলো। শুক্রবারও চলে দিনভর বিক্ষোভ। কিন্তু পুলিশের দাবি, চাকরি যাওয়া নিয়ে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই। চাকরি যাওয়ার বেদনা আমরা বুঝি। ওরা কষ্টে আছে। সেটা বুঝি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাই রাজ্য সরকারের প্রহসন। বিশেষ করে শাসকদলের, যাদের দূর্ণীতির জন্য এতগুলো মানুষের চাকরি গেল, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলছেন না মুখ্যমন্ত্রী। বরং ভাতা বা অনুদান দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চাইছেন আন্দোলনকারীদের। এবারও তার অন্যথা হল না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আপাতত চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন পাবেন, স্কুলেও যেতে পারবেন। তারপর তাঁদের পুনরায় যোগ্যোতার প্রমান দিয়ে চাকরি ফেরত নিতে হবে। অন্যদিকে গ্রুপ সি এবং ডি কর্মীদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টও অসহায় ছিল। তাঁদের মধ্যে যোগ্য ও অযোগ্য একেবারেই আলাদা করা অসম্ভব বলে তাঁদের চাকরি পুরোপুরি বাতিল হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দুর্নীতিকেই কার্যত মান্যতা দিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকার নতুন করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে আগের রায় বিবেচনা করার জন্য। এখানেই আপত্তি চাকরিহারাদের। তাঁদের দাবি, যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাঁরা যখন ন্যায্য দাবিতে বিকাশ ভবন অবরোধ করলেন, তখন তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করল পুলিশ। যদিও এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকারের দাবি, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকেই সংযত ছিল। সাত ঘণ্টা পুলিশ আন্দোলনকারীদের কিছু বলেনি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা নষ্ট হলে পুলিশকে পদক্ষেপ করতেই হয়। তবে পুলিশ অনেক ধৈর্য ধরেছিল।’’
পুরো ঘটনাপ্রবাহে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত। জানা যায়, বিকাশভবনে তিনি নাকি কাজে গিয়েছিলেন। আগে থেকেই সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন চাকরিহারারা। বিকাশভবন পৌঁছতেই চাকরিহারাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন সব্যসাচী দত্ত। সব্যসাচীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তখনও চুপচাপ সব্যসাচী গাড়িতে বসে ছিলেন। কিন্তু অচিরেই তিনি মেজাজ হারান এবং এমন কাণ্ড ঘটালেন যা বৃহস্পতিবার দিনভর মিডিয়ার সমস্ত খবরের শিরোনামে ছিল। এরপরই দাবাং মুডে অবতীর্ণ হয়ে তিনি নিজেই টেনে সরাতে থাকেন আন্দোলনকারীদের। যে আন্দোলনকারী তাঁর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন দলবল নিয়ে তাঁদের টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দেন। প্রশ্ন ওঠে তিনি যদি বিকাশভবনে সরকারি কাজেই গিয়ে থাকেন, তবে তাঁর আশেপাশে গুণ্ডামার্কা লোকগুলি কে ছিল? সব্যসাচী বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হন একাধিক সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই বলতে থাকেন, “শো এবার, কত শুবি আর… শো এখানে… দেখি কত শুতে পারিস… আমি শোব…”। বিরোধীদের বক্তব্য, পাহাড় প্রমান দুর্নীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস ধীরে ধীরে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর তাতেই মেজাজ হারাচ্ছেন নেতারা। আর তৃণমূল নেত্রী টাকার টোপ দিয়ে জনগণ ও চাকরিহারাদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। এর জবাব আগামী বিধানসভা ভোটেই দেবেন বাংলার মানুষ।
Discussion about this post