প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ভারতের সবচেয়ে সফল। এমন দাবি সবসময় করে আসছেন বিজেপির নেতা-নেত্রীরা। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখেই ময়দানে নেমেছে বিজেপি। অর্থাৎ এবারও ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তিনি কতদিন প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, সেটা নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির মেয়াদ মাত্র কয়েকমাস। আসলে নরেন্দ্র মোদিকে চাপে ফেলতেই দুরন্ত একটা তাস ফেলেছেন কেজরিওয়াল। বিজেপির অলিখিত নিয়ম বয়স ৭৫ পার করলেই তাঁকে অবসর নিতে হয়। নরেন্দ্র মোদি নিজেই এই নিয়ম চালু করেছিলেন। এই নিয়মের বেড়াজালে লালকৃষ্ণ আডবানি, মুরলি মনোহর যোশী, সুমিত্রা মহাজন-সহ বিজেপির বেশ কয়েকজন প্রথমসারির নেতা-নেত্রী রাজনীতি থেকে অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবার কী তবে নরেন্দ্র মোদির পালা? এটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন আবগারি দুর্নীতিতে ধৃত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
নরেন্দ্র মোদির বর্তমান বয়স ৭৪ বছর। তিনি আগামী সেপ্টেম্বরে ৭৫ বছরে পা রাখতে চলেছেন। মোদির ক্ষেত্রে কি বিজেপির অলিখিত নিয়ম কার্যকর হবে, নাকি তিনি বহাল তবিয়তে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে আসীন থাকবেন সেটা সময় বলবে। যদিও মন্ত্রিসভায় মোদির একান্ত সহযোগী অমিত শাহ অবশ্য মোদির অবসরের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে যদি ৭৫ বছরের নিয়ম মেনেই নরেন্দ্র মোদি অবসর নেন, তবে কে হবেন তাঁর উত্তরসুরী? বিজেপির অন্দরেই উড়ছে কয়েকটি নাম। যারা অনায়াসে নরেন্দ্র মোদির উত্তরাধিকার হতে পারেন।
মোদির পর প্রথমেই যে নামটি আসে তিনি হলেন অমিত শাহ। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ কার্যত একসঙ্গে গুজরাটের রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। সেই সময় থেকেই তাঁদের জুটিকে ‘রাম-বলরাম’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। দুজনেই হরিহর আত্মা। তাঁদের কীর্তি গুজরাট ছাড়িয়ে এখন জাতীয় রাজনীতিতে উঠে এসেছে। যখন মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, অমিত শাহ ছিলেন তাঁর ডেপুটি। এখন মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ তাঁর ডেপুটি। ফলে মোদির জুতোয় পা গলানোর প্রথম দাবিদার অবশ্যই অমিত শাহ। পুরো নাম অমিতভাই অনিলচন্দ্র শাহ। তাঁর জন্ম ১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর অধুনা মুম্বইয়ে। কিন্তু ছোট থেকেই অমিত শাহ থাকতেন গুজরাটের একটি ছোট গ্রাম মানসাতে। এরপরই উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসেন আহমেদাবাদে। তখন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন অমিত। এরপর গুজরাট মন্ত্রীসভায় নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসেন অমিত শাহকে। ২০১৯ সাল থেকে অমিত শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০২১ সাল থেকে তিনি দেশের প্রথম সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন। ফলে দক্ষ সংগঠকের পাশাপাশি তিনি সংসদীয় গণতন্দ্র এবং মন্ত্রিসভার কাজেও সমান দক্ষ। ফলে মোদি প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়লে ৬০ বছরের অমিত শাহই হতে পারেন তাঁর প্রথম বিকল্প।
দ্বিতীয় যে নামটি উঠে আসছে সেটি সবচেয়ে চমকপ্রদ। তিনি হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ১৯৭২ সালের ৫ জুন উত্তরাখণ্ডের পৌরি গাড়ওয়াল জেলার পঞ্চু গ্রামে জন্মগ্রহন করেন তিনি। পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল অজয় সিং বিস্ত। ১৯৯০ সালে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং অযোধ্যার রামমন্দির আন্দোলনে যোগ দেন। পরে সম্পূর্ণ সন্নাস ধর্ম গ্রহন করেন এবং উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত গোরক্ষনাথ মন্দিরের প্রধান মহন্ত হিসেবে মনোনিত হন। বিজেপির অন্দরের খবর, যোগী আদিত্যনাথই হলেন নরেন্দ্র মোদির পর প্রধানমন্ত্রী পদে সবচেয়ে বড় দাবিদার। বর্তমানে তিনি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। বিগত সাত বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে তিনি দুই দশক ধরে সাংসদ ছিলেন। ১৯৯৮ সালে গোরক্ষপুর থেকে মাত্র ২৬ বছর বয়েসে সাংসদ হন। এরপরের সাতবার তাঁকে কেউ হারাতে পারেননি। ফলে সংসদীয় রাজনীতি এবং প্রশাসক হিসেবে তিনি যে যথেষ্ট দক্ষ, সেটা বলাই বাহুল্য।
তৃতীয় নামটি হল জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। বর্তমানে তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্বে। এর আগে জেপি নাড্ডা হিমাচল প্রদেশের বিলাশপুর থেকে বিধায়ক ছিলেন। ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ এবং ২০০৭ থেকে ২০১২ সালে দু দফায় বিধায়ক ছিলেন জেপি নাড্ডা। এরমধ্যে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশের বন, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রীত্ব সামলেছেন।
Discussion about this post