উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৬ জন। নারায়ণ সাকার ওরফে ‘ভোলে বাবা’ নামে স্বঘোষিত এক ধর্মগুরুর ডাকে এই ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকেই তিনি ‘পলাতক’। তবে আড়াল থেকেই তিনি বার্তা দিলেন। দাবি করলেন, দুর্ঘটনার জন্য সমাজবিরোধীরা দায়ী। পুলিশ সূত্রে খবর, এই অনুষ্ঠানে ৮০,০০০ মানুষ আসার অনুমান করেছিল আয়োজকরা। কিন্তু পরে দেখা যায়, অন্তত আড়াই লক্ষ মানুষের ভিড় হয়। এদিকে অনুষ্ঠানে ঢোকা এবং বেরনোর জন্য মাত্র ২টি দরজার ব্যবস্থা ছিল। আর ভিড় নিয়ন্ত্রণে মাত্র ৭০ জন পুলিশ। কেন আগে থেকে আয়োজকরা কোনও ব্যবস্থা নিলেন না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনায় যিনি মূল অভিযুক্ত সেই ‘গডম্যান’-র বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনও অভিযোগই আসেনি। সেই ধর্মগুরু এখন ‘নিখোঁজ’।
এবার আড়াল থেকেই এক ভিডিও বার্তায় ভোলেবাবা বললেন, “ঘটনার পর আমি গভীরভাবে শোকাহত। ঈশ্বর যেন আমায় এই বেদনা সহ্য করার শক্তি দেন। দয়া করে সরকার এবং প্রশাসনের উপর আস্থা রাখুন। আমার বিশ্বাস আছে, যারাই এই কুকর্ম করেছে তারা কেউ ছাড় পাবে না। আমার আইনজীবী এপি সিংয়ের মাধ্যমে আমি কমিটির সদস্যদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গের পাশে দাঁড়াতে বলেছি।” তাঁর সংযোজন, “কিছু সমাজবিরোধী চক্রান্ত করেছেন। যখন নারায়ণ সরকার হরি ওই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে যান, তখন আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা বুঝতেই পারেননি কী ঘটছে। কারণ এটি একটি ষড়যন্ত্র ছিল। পরিকল্পনা করে এটি করানো হয়। এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।” এদিকে এফআইআর-এ নাম নেই স্বয়ং ‘ভোলেবাবা’ নারায়ণ সরকার হরির। তবে তদন্তের প্রয়োজনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। ভোলেবাবার অতীতের রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে সব শহরে তাঁর অপরাধের রেকর্ড থাকতে পারে সেখানে তদন্তকারী দল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার হাথরসে একটি ‘সৎসঙ্গে’র ডাক দিয়েছিলেন ‘ভোলে বাবা’। খোলা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে ‘সৎসঙ্গ’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষেই ঘটে যায় বিপত্তি। হাথরসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই ঘটনার তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করেছে।হাথরাসের ঘটনায় ইতিমধ্যে নিহতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ব্রিজেস কুমার শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গড়েছে রাজ্য।
Discussion about this post