সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক পঠ পরিবর্তনের সময় থেকে আলোচনার শিরোনামে চলে আসেন। সেই সময় থেকে বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে তার সমাজমাধ্যমের স্ট্যাটাস ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। সম্প্রতি ছয় পর্বে তার ফেসবুক পোস্ট আবারো ব্যাপক সাড়া ফেলল বিভিন্ন মাধ্যমে।
‘বিজিবি, র্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা’ এই শিরোনামে সমাজ মাধ্যমে দীর্ঘ পোস্ট করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া। ৬ পর্বের এই পোস্টে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া দাবি করেছেন, তাকে হত্যা করতে কর্নেল জিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। একথা শুনে তার মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গিয়েছিল।
এর পোষ্টের একটি পর্বে তিনি লিখেছেন, একদিন সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্ক দেখা দেয়। অফিসে কার্যরত সবাইকে তাদের অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। ডাইরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুল বোমা-নির্ণয় যন্ত্রপাতিসহ তার টিম নিয়ে দৌড়ে আসেন। পরবর্তী আধা ঘণ্টা অফিসটিতে তন্ন তন্ন করে বোমা খোঁজা হয়। আমাদের ভাগ্য ভালো যে, কোনো বোমার অস্তিত্ব মেলেনি এবং একটা লম্বা অপেক্ষার পর বিল্ডিংটিকে বোমা মুক্ত ঘোষণা করা হয়। আমি জগলুলকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? জগলুল জানালেন তিনি তার এক অফিসার মেজর সুমনের কাছে জানতে পেরেছেন যে, কর্নেল জিয়া আমাকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুনে আমার মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় এবং সিদ্ধান্ত নিই, এখন থেকে আমাকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে ‘বিশেষ করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুলও আমার নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিশেষ করে প্রতি সকালে আমার অফিস ও বাসা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সার্চ করার ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া লিখেছেন,আমি এরপর ফরমেশন অফিসারদের এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এসব ‘অপারেশন বা ক্রসফায়ার’র বর্বরতা ও এতে জড়িতদের সম্ভাব্য পরিণাম সম্পর্কে সরাসরি বলতে শুরু করি। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কোর্সে আসা অনেক অফিসারকে একসঙ্গে সতর্ক করার সুযোগ পাই। তবু দেশজুড়ে পত্রিকায় ক্রসফায়ারের খবর আসতে থাকায় আমি বিরক্ত হয়ে উঠি। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিই র্যাব, ডিজিএফআই, বিজিবিতে আর কোনো অফিসারকে পোস্টিং দেব না।
সবশেষে তিনি লিখেছেন, আজকে আমরা এমন একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি যে র্যাব সম্পর্কে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী। আমি সেনাপ্রধানকে অনুরোধ করব যেন তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন। সেটি সম্ভব না হলে সামরিক অফিসারদের র্যাব থেকে যেন স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসেন। এটি করার জন্য বর্তমান সেনাপ্রধানের যে স্বাধীনতা তৈরি হয়েছে আগের কোনো সেনাপ্রধানের তা ছিল না। তার এই নতুন অবস্থানের জন্যই তাকে অনুরোধ করছি তিনি যেন আমরা যে কাজটি করতে পারিনি সেটি সম্পন্ন করেন।
সম্প্রতি এই চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে আবারো খবরের শিরোনামে উঠে আসলেন জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তার এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা সামনে আসতেই আরো সতর্ক হতে শুরু করেছে সেনানিবাসে কর্মরত সেনাকর্তারা।
Discussion about this post