বৈশাখের প্রায় শেষ। কালবৈশাখী সহ বৃষ্টিপাত বেশ কিছু জেলাতেই ঘটছে। ঝোড়ো হওয়ার সাথে মধ্যম প্রকৃতির বৃষ্টিতে ভিজেছে শহর কলকাতা।
গরম থেকে সাময়িক স্বস্তির আরাম পেয়েছে শহর বাসি। কিন্তু গরম পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। এখনো গরমে নাজেহাল হতে হচ্ছে প্রত্যেককে। এই গরম থেকে রেহাই পেতে আমরা ঠান্ডা পানীয় , মিষ্টি, ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা , রসালো, মিষ্টি ফলের উপর ভরসা রাখছি। রসালো মিষ্টি ফলের নাম বললেই সর্ব প্রথম এই সিজেনে যে ফলটির কথা আমাদের প্রথমেই মাথায় আসে সেটি হল , সুস্বাদু রসালো পাকা আম। আম পাকা হোক কিংবা কাঁচা সবেতেই আমাদের প্রথম তালিকায় থাকে এই ফল। কাঁচা আম যেমন আমরা আচার, আমপোরা শরবত , আম তেল , আম ডাল ইত্যাদি করে খাই, তেমন পাকা আমের এই গরমে প্রবল চাহিদা প্রত্যেকের কাছে। আমের ঘোল, আম শরবত, পাকা আমের মিষ্টি, আইসক্রিম ইত্যাদি খাই। পাঁকা কাঁচা উভয় আমেরই গুনাগুন আমাদের প্রত্যেকেরই জানা। তবে আম পাতার গুনাগুন কি আমরা জানি ? সেই নিয়ে বিশেষ আলোচনাও হয়না। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন ? আমি পাতা আবার কেউ খায় নাকি! কিন্তু আজ্ঞে হ্যাঁ এই আম পাতাতেই আছে বিশাল পুষ্টিগুণ , যা আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয়। খেতে মুখরোচক নয় এটি , কিন্তু ওষুধ মনে করে এটি খেতে পারেন। কারণ একবার এই পাতা নিয়মিত সেবন অভ্যাস করতে পারলেই মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন বিভিন্ন রকম গুরুতর ব্যাধির হাত থেকে। জানেন কি আপনার শরীরের কোন কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগ সারাতে পারে এই পাতা ? তাহলে আজ কে এই প্রতিবেদনের মধ্যমেদ জেনে নিন বিস্তারিত।
আম পাতার পুষ্টিগুন এবং বিভিন্ন অসুখে ঔষধি গুন:
আমরা অনেকেই আমপাতা স্বাস্থ্যগুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই। কিন্তু এর স্বাস্থ্যগুন ও ঔষধি গুন জানলে আপনার চক্ষু কপালে উঠে যাবে। তাই সময় নষ্ট না করে এর ঔষধি গুন বিশদে জেনে নিয়ে নিয়মিত এই পাতা সেবন করুন।
ডায়াবেটিস নিরাময় : ডায়াবেটিস বা সুগার এমন একটি রোগ যা রক্তে শর্করাকে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আমাদের বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় সমস্যা দেখা দেয়। তাই রক্তে শর্করাকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। আর এই কাজে আপনাকে সব থেকে ভালো সাহায্য করবে আম পাতা। আম পাতা রক্তে শর্করার লেভেলকে বাড়তে দেয় না। এর মধ্যে উপস্থিত ৩ বিটা ট্রারাক্সেরল এবং ইথাইল অ্যাসিটেট ব্লাড সুগার কে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
.অ্যান্থোসায়ানিন যা রক্তে শর্করাকে বাড়তে দেয়না। ফলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ : হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ ভীষণ ক্ষতিকারক রোগ। এর ফলে , রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা, দুঃচিন্তা , হার্ট অ্যাটাক , এমনকি কিডনিতে চাপ , স্ট্রোকের মতন সমস্যায় পড়তে হয় । আম পাতা আমাদের শরীরের রক্তের লেভেল কে ঠিক রেখে, রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করে হাইপোটেনসিভ সমৃদ্ধ আমি পাতা। তাই আম পাতার নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে আপনি উচ্চ রক্ত চাপ কে কন্ট্রোলে রাখতে সক্ষম হবেন।
গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময় :
অনিয়মিত খাবার খাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে বেশি মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আপনি আলসারের স্বীকার হতে পারেন। আজকাল প্রায় লোকই পেটের আলসারে কষ্ট পান। এই সমস্যা চির মুক্তি দিতে পারে সবুজ আম পাতা। তাই নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি আমি পাতা কে খাদ্য তালিকায় অন্তরর্ভুক্ত করুন। তাহলেই এই অসুখের থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পেতে পারবেন। এবং তা হবে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা।
কি নিয়মে এবং কটা করে খাবেন আমপাতা :
প্রতিদিন সকালে উঠে খালিপেটে খান আমি পাতা। কচি সবুজ আমপাতা দুটি করে নিয়ে ছোটো ছোটো টুকরো করে জল দিয়ে গিলে খেলেই ব্যাস কেল্লাফতে। না হলে আপনি কাঁচা নিমপাতা যেমন চিবিয়ে খান, তেমন ভাবে এই পাতা টিকেও চিবিয়ে খেয়ে জল খেতে পারেন। তবে ২-৩ তীর বেশি খাবেন না। তাছাড়া সকালে চা এর সাথে দুটি আমপাতা ফুটিয়ে ও নিয়মিত সেবন করতে পারেন।
তাহলে আজ থেকেই খাদ্যতালিকায় রেখে দিন এই পাতা এবং এই সব দীর্ঘমেয়াদি রোগকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
Discussion about this post