আমরা সাধারণ মানুষ যেগুলো করতে পারিনা, রোবটের পক্ষে খুব অনায়াসে তা করা সম্ভব হয়।বিভিন্ন কাজে রোবটের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু অস্ত্রপ্রচারে রোবটের ব্যবহার কখনো শুনেছেন কি? চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ এক অনন্য সফলতা। এবার ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময়ে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করবে রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি। এখন বেশিরভাগ অস্ত্রপ্রচারে মাইক্রো সার্জারি করা হয়। ব্রঙ্কোস্কোপি কিছুটা এমনি সিস্টেম, কিন্তু আরো অত্যাধুনিক রোবোটিক সিস্টেম এটি। যেটি ব্যবহারের ঝুঁকি কম এবং ক্যান্সার নিরাময়ে ও বিশেষ সহায়ক।
শ্বাস নালীতে টিউমার বা ক্যান্সার হলে আমরা প্রথমেই বুঝতে পারিনা, বেশিরভাগ চিকিৎসক ভাবেন যক্ষ্মা হয়েছে। পরে টিউমার ধরা পড়লে বুকে অস্ত্রোপচার করতে হয়। বুকে কাটা ছেঁড়া ও সেলাই করতে হয়, যেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এবং অস্ত্রোপচারের জায়গা শুকোতেও সময় লাগে। তাই কোনো রকম কাঁটাছেঁড়া , সেলাই ছাড়াই অস্ত্রোপচার করবে ছোট্ট রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি। রোবোটিক সার্জারির ক্ষেত্রে ঠিক কোথায় টিউমার কোষ তৈরি হচ্ছে তার ত্রিমাত্রিক চিত্র বের করার চেষ্টা করেন চিকৎসক। এক্ষেত্রে আগে বুকে এক্সরে, তাছাড়া সিটিস্ক্যান, এম আর আই, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করে । কতটা জায়গা জুড়ে টিউমারটি ছড়াচ্ছে, কত দ্রুত ক্যানসার-কোষের বিভাজন হচ্ছে, এই সবই খুঁটিয়ে দেখেন চিকিৎসক।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের রোবোটিক পদ্ধতিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘ রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি। যা ফুসফুসের ক্যানসার কোষকে নির্মূল করতে পারে । ক্যান্সার প্রাণঘাতি হওয়ার আগে ক্যান্সারের কোষকে চিহ্নিত করে সমুলে সেই কোষ করে নষ্ট করে দিতে সক্ষম এই রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি। যার ফলে সেই ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য কষে ছড়িয়ে পড়েনা।
রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি কি?
রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি হল একটি ধাতব নল। যা অস্ত্রোপচারের সময় সোজা আমাদের শ্বাস নালীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ব্রঙ্কোস্কোপের এই আধুনিক পথকেই রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি বলে। এই রোবোটিক অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর এক্সরে, এম আর আই, সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। রোগের অর্থাৎ টিউমার বা ক্যান্সারের অবস্থান বোঝার জন্য। শ্বাসনালীর মধ্যে কিছু আটকে আছে কিনা, নালীর মধ্যে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কিনা এই ব্রঙ্কোস্কোপ পদ্ধতিতেই জন্য যায়। ব্রঙ্কোস্কোপের সাহায্যে শ্বাসনালী, গলার স্বরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এবার সেই পদ্ধতিকেই আরো আধুনিক করে ‘রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপের’ আবিষ্কার হল। যা শ্বাসনালীর টিউমার ও ফুফুসের ক্যান্সার নিরাময়ে খুব ভালো কার্যকরী অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হবে।
রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে ফুসফুসের মধ্যে টিউমার ঠিক কোথায় হয়েছে এবং কতোটা জায়গা জুড়ে টিউমারটি অবস্থান করেছে এই রোবোটিক সার্জারির মাধ্যমে প্রথমে তার ত্রিকোণ চিত্র বের করেন চিকিৎসকরা। এবং ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কতটা কোষ নিয়ে ক্যান্সার ছড়াচ্ছে, মোট কটা কোষ নষ্ট হয়েছে, এবং সেগুলি ক্যান্সারের কোষ কিনা তা দ্রুত চিহ্নিত করে। সব কিছু খুঁটিয়ে নাটিয়ে দেখে তারপরেই চিকিৎসক অস্ত্রোপচার শুরু করেন।
অস্ত্রোপচার কিভাবে হয়?
ছোট ছোট মোট পাঁচটি ছিদ্র করে মাত্র ১ সেন্টিমিটার চওড়া রোবটের হাত এবং ছোট ক্যামেরা ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেই অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। শরীরের যে কোনো জায়গায় রোবটের ১ সেমি হাত পৌঁছে, জটিল অস্ত্রোপচার করতে পারে। রোবট তার ১ সেন্টিমিটারের হাতকে ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরিয়ে শরীরের জটিল স্থানে গিয়ে রোগ নিরাময় করে। যেটি মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়না। তাছাড়া শরীরের রোগের স্থানকে সঠিক নির্বাচন করতে পারে রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি। ফলে শরীরের অন্যান্য জায়গার ক্ষতি না করে শুধুমাত্র সেই স্থানকে নিরাময় করে। সাধারণত আমরা অস্ত্রোপচারের কথা শুনলেই ভয় পাই। কিন্তু এই পদ্ধতিতে রোগীর জ্বালাপোড়া হবে কম এবং কোনো রকম কাঁটা ছেড়া, ও সেলাই ছাড়া অস্ত্রোপচার সম্ভব হবে। সাথে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারবে।
Discussion about this post