কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মুহাম্মদ ইউনূসকে। এর আগে তিনি চিনে গিয়ে চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে নিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। যা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। ভারতও বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এবার ফের তিনি সেভেন সিস্টার্সকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এক ফেসবুক পোস্টে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ঐক্যবদ্ধ অর্থনৈতিক কৌশলের পক্ষে সাওয়াল করলেন। তাঁর কথায়, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের জন্য একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা উচিৎ। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের ৫ নম্বর ইয়ার্ড পরিদর্শনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এর আগে তিনি যেমন বলেছিলেন, ভারতের সেভেন সিস্টার্স ল্যান্ডলকড, এবার বললেন, চট্টগ্রাম বন্দর শুধু দেশের নয়, বরং নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সের অর্থনৈতিক প্রবাহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে জোরদার বিতর্ক চলছে। এই আবহেই তিনি চট্টগ্রামে গিয়েছেন এক সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখানে গিয়েও তিনি ফের একবার ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন ভারতের সাতটি রাজ্য ল্যান্ডলকড। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মঙ্গলবারই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, আমরা আশাবাদী, দ্রুত বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভারতের এই প্রতিক্রিয়ার মতোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার যে পদ্ধিততে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না।
একদিকে ভারত অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, আওয়ামী লীগ ইস্যুতে একই সুরে কথা বলছে। যা যথেষ্টই চিন্তার বিষয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অন্যদিকে বাংলাদেশজুড়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ভবিষ্যত নিয়ে। কারণ, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রথম বিজয় অর্জন করল ইউনূস প্রশাসন। কিন্তু হাসিনা আমলের দুই শক্তিশালী স্তম্ভ এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন। একজন হলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান অন্যজন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তবে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে খুব একটা চিন্তার বিষয় না থাকলেও ওয়াকার উজ জামানকে নিয়ে চিন্তার কারণ যথেষ্ট আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, ইউনূস বাহিনীর আতঙ্ক বেড়েছে অপারেশন সিঁদুর এবং পাকিস্তানের বেহাল দশার পর থেকে। যা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভ্যন্তরে এখন প্রবল আতঙ্কের পরিবেশ। পাকিস্তানি সেনার কোমর এমনভাবে ভেঙেছে ভারত যে তাঁরা এখন পাল্টা কিছু করতে ভয় পাচ্ছে। ভারতের প্রবল চাপে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখন পর্যুদস্ত। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনার মধ্যে পাকিস্তানপন্থীরা এথন কার্যত কোনঠাসা। এমনও খবর পাওয়া যাচ্ছে, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটানেন্ট ফইজুর রহমান, বা লেফটানেন্ট জেনারেল কামরুল হাসানকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে সরিয়ে দিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। তিনি ইউনূস সরকার এবং পাকিস্তান সমর্থিত সেনাকর্তাদের এবার দূরে ঠেলতে শুরু করেছেন। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মিয়ারমারের রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মির জন্য যে মানবিক করিডোর দেওয়ার কথা হয়েছিল, তাতে প্রথম থেকেই সায় ছিল না জেনারেল ওয়াকারের। ভারত পাকিস্তানকে কোনঠাসা করে দিতেই জেনারেল ওয়াকার নাকি নড়েচড়ে বসেছেন। তাই তাঁকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইউনূস প্রশাসন। সেনাপ্রধানও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে ঘনঘন আলোচনা করছেন। সূত্রের খবর এই আবহে তাঁর মার্কিন সফর বাতিল হয়েছিল। ফলে আগামী কয়েকদিনে যদি বাংলাদেশে সেনাশাসন বা অন্য কোনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের জনগণের একটা বড় অংশ এখনও সেনাপ্রধানের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কারণ বর্তমান বাংলাদেশের বেহাল দশায় একমাত্র সেনাবাহিনীই পারে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। এখন দেখার কে আগে কাকে মাত দিতে পারে।
Discussion about this post