উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ‘ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট’ সুবিধার জন্য আবেদন জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। এবার সেই আবেদন সরাসরি নাকচ করে দিল মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ‘ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট’ করার আবেদন করা হয়েছিল শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগ সরকারের কাছে। এর অনুমোদনের প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতের পড়শি দেশে এখন ভারত বিরোধী হাওয়া চলছে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই। বদলের বাংলাদেশে এখন মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার শাসন করছে। তাঁদের মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনার আমলে হওয়া যাবতীয় চুক্তি, প্রকল্প বাতিল করা নয়তো সেগুলি যাচাই করে কাটছাঁট করা। ফলে কোপ পড়ল ‘ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট’ চুক্তিতে।
বাংলাদেশের টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি গত ১ ডিসেম্বর জানিয়েছে ভারতকে এই সুবিধা দেওয়া যাবে না। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তদারকি সরকার। মূলত বাংলাদেশের বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই দেশ চালাচ্ছেন। তাঁদের পরামর্শ এবং বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাতেই তদারকি সরকার চলছে। আর এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের মূল দাবিই হল হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে হওয়া সমস্ত চুক্তি, মউ বাতিল করার। এটা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনিও বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর রামপালসহ অন্যান্য চুক্তি বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের অর্থনৈতিক নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার আমলে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একাধিক চুক্তি করেছিল। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান চুক্তিগুলি ছিল ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি বা সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ উন্নত করা। যেমন, ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট, রেল ও সড়ক ট্রানজিট, বাংলাদেশের দুটি বন্দর ব্যবহার করার চুক্তি। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে রেল ও সড়ক পথে আগরতলা পর্যন্ত দুটি করিডোর করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ অনেকটাই এগিয়েছিল হাসিনার আমলে। এরজন্য আঘাউড়া সীমান্তবন্দরে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের রেলপথ সংস্কারের কাজও অনেকটা হয়ে গিয়েছিল। অপরদিকে, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে ইন্টারনেট সংযোগ আরও দ্রুত করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট করার কথা ছিল। প্রসঙ্গত, প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ তথ্য পাঠানো যায় তাকে ব্যান্ডউইথ বা ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড বলা হয়।
কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তদারকি সরকার এই প্রস্তাব পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছে। ‘বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন’ দাবি করেছে, আঞ্চলিক ডিজিটাল হাব হিসাবে বাংলাদেশের ভূমিকা দুর্বল হতে পারে, এমন আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই ব্যান্ডউইথ ট্রানজিটের জন্য আগরতলা-আখাউড়া সীমান্তে একটি ইন্টারনেট সার্কিট স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু বিটিআরসি দাবি করেছে, স্থলপথে কেব্ল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ওই ট্রানজিট সংযোগে বাংলাদেশের তেমন কোনও লাভ হত না, বরং লাভ হত ভারতের। একইভাবে, ২০২৩ সালে আওয়ামি লিগ সরকার ভারতকে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল। বর্তমান সরকারকে বন্দর ব্যবহারের চুক্তি বাতিল করেছিল।
Discussion about this post