একদিকে সীমান্তে রোজ চলছে উস্কানি। অন্যদিকে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার লাগানো নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে বারবার বিবাদে জড়াচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবি। এবার শেখ হাসিনার আমলে হওয়া সব সীমান্ত চুক্তি বাতিলের ঘোষণা করে দিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধেই আনলেন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অবান্তর অভিযোগ। সবমিলিয়ে ইতিহাস ভুলে ভারতের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে চাইছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নিজের অজান্তেই বড় বিপদ ডেকে আনছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
ভারত ও বাংলাদেশ প্রায় ৪,১৫৬ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত ভাগাভাগি করে। এটা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে চিহ্নিত। মোট সীমান্তের ২,২১৭ কিমি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে, বাকি ২৬২ কিমি পড়ছে অসম, ১৮০ কিমি মিজোরামে, ৪৪৩ কিমি মেঘালয়ে এবং ৮৫৬ কিমি ত্রিপুরায় পড়ছে। সূত্রের খবর, মোট ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩২৭১ কিমি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আছে। অবশিষ্ট ৮৮৫ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত। গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ভারত সম্পর্কে নিয়মিত কুরুচিকর মন্তব্য এবং লাগাতার আক্রমণাত্মক হুমকির জেরে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, দ্রুত ওই অরক্ষিত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। সেই মতো কাজও শুরু করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
কিন্তু বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হতেই বাঁধা দিতে শুরু করে বিজিবি। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে নামতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকেও। একদিকে বাংলাদেশের মানুষ অন্যদিকে ভারতীয় নাগরিকরা একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু ভিডিও ভাইরালও হয়। এবার আসরে নামেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। যিনি কার্যত দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করে আসছিলেন। এবার তাঁর সরাসরি অভিযোগ, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। এরপরই তিনি ঘোষণা করে দেন, হাসিনা সরকারের আমলে হওয়া সব সীমান্ত চুক্তি বাতিল করা হবে। যা নিয়ে নতুন করে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের পরই সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় অবস্থিত ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় বর্মাকে তলব করা হয়েছিল। গত রবিরার তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখাও করে আসেন। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারত সরকার তলব করে নয়া দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশের উপ রাষ্ট্রদূত নুরুল ইসলামকে। ফলে কূটনৈতিক স্তরে দু-দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বাংলাদেশের অভিযোগ, নিয়ম লঙ্ঘন করে ভারত জিরো পয়েন্টের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। যদিও ভারত তা অস্বীকার করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দাবি করেন, বাংলাদেশের জমি ভারত দখল নিয়ে আছে। তাই আমরা কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হচ্ছি। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও দাবি করেন, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, ফেনী এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলে সীমান্তের জনগণ ও বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে বিএসএফ বেড়া নির্মাণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। যদিও সোমবার, সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া বিবাদের জেরে, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নুরাল ইসলামকে তলব করেছিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। সাউথ ব্লকে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে এই নিয়ে ভারতের অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে নয়া দিল্লি।
পরে একটি বিবৃতি দিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে থাকা সব ধরনের প্রোটোকল এবং চুক্তি মেনেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বেড়া দেওয়া-সহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিএসএফ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মধ্যে যে সমস্ত প্রোটোকল এবং চুক্তি আছে সেটাও মেনে চলছে ভারত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে অপরাধমূলক কার্যকলাপ, চোরাচালান এবং পাচার বন্ধ করার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলির মোকাবিলা করবে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, হাসিনার আমলে হওয়া সমস্ত সীমান্ত চুক্তি বাতিল করা হবে। এখানেই প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ, দুটি নির্বাচিত সরকারের মধ্যে হওয়া কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা যায় না। এটা হয় বোঝেন না বাংলাদেশের উপদেষ্টারা, না হয় বাজার গরম করার জন্যই এই ধরণের মন্তব্য করছেন তাঁরা। এই ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এর আগে বহুবার করেও পরে ঢোক গিলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এবারও তাই হবে।
Discussion about this post