গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়েছিল আগামী ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সেদেশে স্থায়ী সরকার স্থাপন করা হবে। আট মাস কেটে গিয়েছে। বাংলাদেশে মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বধীন অন্তর্বর্তী সরকার শাসন কাজ চালাচ্ছে।তবে নির্বাচনকে ঘিরে সে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে মনোমালিন্য হতে দেখা গিয়েছে অন্তরবর্তী সরকারের। এবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সরকারি বাসভবন যমুনাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপির। সূত্র বলছে এই বৈঠকে ইউনূসের বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি।
এইদিন সরকারি বাসভবন যমুনায় বৈঠকটির পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি খানিকটা অসন্তোষ প্রকাশ করে বুঝিয়ে দেন, এই বৈঠকে তারা সন্তুষ্ট নন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন বহু প্রতীক্ষিত মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকটি ব্যর্থ হয়েছে। জানা যাচ্ছে, বৈঠকে বিএনপি ইউনূসের কাছে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিল। কিন্তু ড. ইউনূস বরাবরের মতো নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, এই বছরের শেষে কিংবা পরের বছরের জুনে মধ্যে। বিএনপির নেতারা বৈঠকে স্পষ্ট করে মোহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন, এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চান তারা। আর এখানেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কোনও মতেই চাইছেন না প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ক্ষমতার অলিন্দে থেকে যেতে চান।
এরপরে এই বৈঠক প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘এই বৈঠকের আলাপ আলোচনা শেষ হওয়ার পরে বিএনপির অধিকারিকদের সন্তুষ্টই মনে হয়েছিল। তাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল সেগুলোর উত্তর তাঁরা পেয়েছেন।’ এরপর তিনি আরও বলেন,‘ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করব অথবা মে বা জুন মাসে নির্বাচন করবো তেমনটা নয়। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে এর মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্বাচন করবো। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন এটা প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার।’
সেই সঙ্গে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বেশ কিছুদিন আগেই ছাত্র নেতাদের একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠিত হয়েছে। এই রাজনৈতিক দলটি গঠন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বিতর্কে চলে আসে। তবে মোহাম্মদ ইউনুস চাইছেন, ছাত্র নেতাদের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে আরো শক্তিশালী হোক। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ এই দলটির ওপর আস্থা রাখুক। পাশাপাশি তারা জোরদার করুক কর্মসূচি। সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে যতদিন সময় লাগবে তত দিন নির্বাচন আটকে রাখবেন মোহাম্মদ ইউনুস। শুধু তাই নয়, ছাত্র নেতারা তাকে গুরুত্ব দেয় সেটাকেই কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দল যদি ক্ষমতায় আসে নির্বাচনের মাধ্যমে, তবে প্রথমে ইউনুস কেই ক্ষমতায় বসাবেন ছাত্রদের রাজনৈতিক দল। আর সেই কারণেই সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের পিছতে চাইছে তারা।
পাশাপাশি, বিএনপির মত শক্তিশালী দলও ইউনুসের সিদ্ধান্ত টলাতে পারছে না। তবে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। আর এতে সমস্যায় পড়তে পারেন ছাত্রনেতা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং তার প্রধানও।
Discussion about this post