পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর রয়েছে, তাতে ১৯জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে সূত্রে খবর। বিশ্বের অন্যান্য সংঘর্ষের থেকে এই দুই দেশের সংঘর্ষ অত্যন্ত ভয়ানক। কি এমন ঘটনা ঘটল, যা কার্যত দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি হয়ে গেল? প্রশ্ন উঠছে। পাশাপাশি এর পিছনে কি বড় কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে?
আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালিবান। তারাই সমগ্র দেশটিকে শাসন করছে। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানি জঙ্গি হামলা হচ্ছে। তবে আফগানিস্তানে ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী তালিবান এই অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সম্পর্ক জটিল আকার ধারণ করে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এর জেরে আফগানিস্তানে ৫ নারী এবং শিশু নিহত হয়। আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালিবান ফেরার পর থেকে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি সংহিংসতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জঙ্গিদের পুনত্থান ঠেকাতে রীতিমতো লড়াই করছে ইসালামাবাদ। বিভিন্ন সময়ে চলতি বছরে ৩৮৩ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে দেশের সামরিক বাহিনী সূত্রে। সামরিক বাহিনীর অন্তত ৯২৫ জঙ্গিকে হত্যা করেছে বলে খবর পাকিস্তান সূত্রে। অনেকে বলছে, আফগানিস্তান উন্নয়ন করছে। সেই জন্যই তারা যুদ্ধা লাগাচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ বলছে, দুই দেশের বিভিন্ন জটিলতার জন্যই যুদ্ধ লেগেছে দুই দেশের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, বিমান হামলার প্রতিশোধে সক্রিয় হয় আফগানিস্তানের তালিবান গোষ্ঠী।পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালায় তালিবান। এই হামলার পরেই একটি বিবৃতি জারি করে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানে হামলা চালানোর বিষয়টি স্পষ্ট করে না জানালেও, তারা জানিয়েছেন শনিবার তালিবান যোদ্ধারা বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত বোঝাতে আফগান সরকার মূলত এই হাইপা থেটিক্যাল লাইন শব্দটি ব্যবহার করেন। বিবৃতে আরও জানানো হয়, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকেরা কয়েকদিন আগে আফগানিস্তানে হামলা চালায়। এসব গোষ্ঠীর আস্তানা ও বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে আফগানিস্তানের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল থেকে তালিবান যোদ্ধারা হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এন আই তুল্যা খোওয়ারাজমি বলেন, যেখানে হামলা চালান হয়েছে সেটাকে আমরা পাকিস্তানের এলাকা বলে বিবেচনা করিনা। তবে এটা বলতে পারি যে হাইপাথেটিক্যাল লাইন এর বিপরীতে থাকা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
আবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ব্রিটিশদের তৈরি করা ডুরান্ড সীমান্ত নিয়ে দু’দেশের দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। একে অপরের ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দিতে চায় না দু’দেশই। ওই বিবৃতিতেও সেই দ্বন্দ্বের ইঙ্গিতই দিয়েছেন আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র। এদিকে পাকিস্তানের শাহবাজ শরিফ সরকার বারবার অভিযোগ করেছে, তাদের দেশে অশান্তি আর সন্ত্রাস ছড়ানোর পিছনে রয়েছে তালিবান মদতপুষ্ট এই জঙ্গি গোষ্ঠীরই হাত। অবিলম্বে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ না করলে তার ফল ভুগতে হবে বলে তালিবান প্রশাসনকে সম্প্রতি হুমকি দিতেও শোনা গিয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রীকে।
Discussion about this post