আচমকাই আলোচনার শিরোনামে পানামা খাল! এই খালের উপর যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার পানামার প্রেসিডেন্টও পাল্টা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, পানামা ও এর আশেপাশের এই ইঞ্চি অঞ্চলও ছাড় দেবেনা তারা। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক,কেন এই পানামা খালে অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?
প্রথমেই জানিয়ে রাখি পানামা খাল একটি ৮২ কিমি দীর্ঘ একটি কৃত্তিম জলপথ, যেটি প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর কে সংযুক্ত করেছে। এই খালটি থাকায় বাণিজ্যক জাহাজ গুলিকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিতে হয়না। এববং দক্ষিণ আমেরিকার ঝড়ো আবহাওয়া ও বরফ আবৃত পথে ভয়ংকর ভ্রমণের হাত থেকেও বাঁচিয়ে দেয়। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাস অবধি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট ১০ হাজার জাহাজ এই পথ দিয়ে যাওয়া আসা করেছে। যেগুলো মূলত বিপুল পরিমান বাণিজ্যক সম্পদ নিয়ে পারাপার করেছে।
চলতি বছরই ৪৭ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৫ এর ২০জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন তিনি। তার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এর তরফ থেকে অভিযোগ, পানামা খাল দিয়ে যাওয়া আমেরিকান জাহাজগুলি থেকে অন্যায় ভাবে ফি আদায় করা হচ্ছে বলে । সদ্য নির্বাচিত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মাঝখান দিয়ে প্রশান্ত এবং আটলান্তিক মহাসাগরকে সংযুক্ত করা এই গুরুত্বপূর্ণ খালটি পরিচালনার কাজে চিনের কোনও খবরদারি তিনি বরদাস্ত করবেন না। পানামা প্রশাসন এই খালটির পরিচালন ব্যবস্থা সুরক্ষিত করতে না পারলে আমেরিকা সেটির নিয়ন্ত্রণভার নিজের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এই প্রসঙ্গে সরকারি ভাবে পানামা প্রশাসন কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
উল্লেখ্য সমুদ্রপথে সারা বিশ্বের মোট পণ্য-পরিবহণের প্রায় ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে পানামা খালটি ব্যবহৃত হয়। এতে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ উপকূল ঘুরে যেতে হয় না বলে অনেকটা সময় ও খরচা দুটোই বাঁচে। মূলত খালটি তৈরি করেছিল আমেরিকা। ১৯১৪ সালের থেকে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা এবং পানামার প্রশাসন খালটি পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছিল। ১৯৭৭ সালে আমেরিকার ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের আমলে সই হওয়া চুক্তির ফলে ১৯৯৯ থেকে এই খালটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায় পানামা।
এবার সম্প্রতি নিজের সমাজমাধ্যম পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ তুলেছেন, এই খালপথ ব্যবহার করতে দেওয়ার বিনিময়ে পানামা আমেরিকার কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায় করছে। তিনি আরও বলেন ‘‘আমাদের নৌবাহিনী এবং বাণিজ্যের প্রতি অত্যন্ত অন্যায় এবং অবিবেচক আচরণ করা হচ্ছে। “
প্রসঙ্গত, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর এবার ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি, মার্কিন সংবাদমাধ্যমর প্রতিবেদন এর তথ্য থেকে জানা গেছে, পেপালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেন হাওয়ারিকে ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার সময় গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাম্প।
এর আগে কানাডার ভূখণ্ড দখল করে তাদের আমেরিকার ৫১তম প্রদেশ হিসেবে গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই তালিকায় এবার জুড়ে গেল গ্রিনল্যান্ড ও পানামার নামও।
Discussion about this post