২০১৬ সালের এসএসসি পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ওদিকে খাড়া ঝুলছে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির উপর। অনেকে বলছেন, এবার কি এতগুলো চাকরিও যেতে চলেছে? তবে কি ভোটের আগে বড় ধাক্কা রাজ্য সরকারের? এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে, সওয়াল করলেন রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হয় বলে জানা যায়। বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত চলে এই শুনানি। পর্ষদের হয়ে সওয়াল করেন এজি কিশোর দত্ত। আগামী ২৩ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এদিন ৩২০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক মামলার শুনানিতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে এজি কিশোর দত্ত বলেন, তৎকালীন সিঙ্গল বেঞ্চে থাকা বিচারপতি সঠিক বিচার পদ্ধতিতে নাকি বিচার করেননি। একধিক প্রশ্ন রয়েছে শুনানি পদ্ধতি নিয়ে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে মামলাকারীদের বক্তব্য শোনার পরে ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, আপনারা তো আগে মেনে নিয়েছিলেন। তবে এখন কেন এই দাবি করছেন? তখন এজি সাফাই দিয়ে বলেন, সব মামলার জন্য তো ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়া যায় না। রাজ্যের আইনজীবী আরও বলেন, প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের পিছনে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না নেওয়ার কারণ দেখিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। পর্ষদ জানিয়ে দেয়, এই অভিযোগের কোনও গুরুত্ব নেই। জেলাভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ হয়। ওই টেস্টও সেই অনুযায়ী নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে সঙ্গে সঙ্গেই বিচারপতিরা জানান, এইতো বলা হচ্ছিল রাজ্য সরকারের তরফের মেধাতালিকা দরকার নেই। এখন আবার আপনারা বলছেন, জেলাভিত্তিক মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছে? তাহলে ঠিক কোনটা সত্যি? আগে আপনারা নিজদের অবস্থান ঠিক করুন।
অর্থাৎ ২৬ হাজার শিক্ষকের যে চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে, তাতে যত বেশি দুর্নীতি ধরা পড়েছে, তার থেকে বেশি দুর্নীতি এই ৩২ হাজার চাকরিতে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৬ মে কলকাতা হাইকোর্টের সেই সময়ের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। যে নির্দেশ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্য জুড়ে।তবে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। যদিও সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। পরে মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। তবে কলকাতা হাইকোর্টেই মামলা ফেরত পাঠানো হয়। যদিও শুনানি স্থগিত হয়। জানা যায়, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষাতে পাশ করেন প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার জন। ২০১৬ সাল থেকে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয় পর্ষদের পক্ষ থেকে। চাকরি পান ৪২ হাজার ৯৪৯ জন। কিন্তু ওই নিয়োগে একাধিক ত্রুটির অভিযোগ ওঠে। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত করা হয়। তারই ভিত্তিতে চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। যেটুকু এই শুনানি থেকে বোঝা যাচ্ছে, তাতে অনেকে বলছেন, এই মামলা গেলে চাকরি থাকবে না। এখন দেখার, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কি পদক্ষেপ করা হয়!
Discussion about this post