পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাক যুদ্ধ আবহ এবং তার পরিণতিতে পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের হামলা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে সময় সময় সাংবাদিক বৈঠক করে প্রমাণ-সহ যাবতীয় হামলার বিবরণ দিয়েছিল। কিন্তু এই বাংলার এক প্রবীন তৃণমূল সাংসদ সেনাবাহিনীকেই কার্যত মিথ্যা প্রমান করতে ব্যস্ত। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের ব্যাখ্যা, “কোনও যুদ্ধই হয়নি। ব্যাপারটা প্রায় হাস্যকর হয়েছে”।
চার দিন ধরে চলা ভারত-পাক সংঘর্ষ আচমকাই ছেদ পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফে প্রথম ঘোষণা আসে দুই দেশের সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে। তারপর ভারতের বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দেয়। যা নিয়ে গোটা দেশেই একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেন সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করবেন? তাহলে কি ভারত সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথানত করল? বিভিন্ন মহলে এই ধরণের প্রশ্ন এবং কৌতুহল জন্ম নিলেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৌর্য এবং সাহসিকতা নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেননি। তবে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় তুললেন। দমদমের এই প্রবীন সাংসদকে খুব সমীহ করেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এক বেসরকারি চ্যানেলে ভারতীয় সেনার দ্বারা পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি ধ্বংস করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌগত রায় বলেন, এসব বানিয়ে বানিয়ে বলা। কোথায় জঙ্গিঘাটি ধ্বংস হয়েছে ? তার প্রমাণ কেন্দ্রীয় সরকার রাখুক না মানুষের সামনে।আমি তো দেখছি ছবিতে, ওই একটা দুটো মাসুদ আজাহারের যে জায়গা, পুরনো ভাঙা বাড়ি, একে জঙ্গিঘাটি ধ্বংস করা বলে ?
বাইট – সৌগত রায়, তৃণমূল সাংসদ
ট্রাম্পের নাক গলানো প্রসঙ্গেও নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তুলোধনা করেন সৌগত রায়। তাঁর কথায়, ইউক্রেনের জেলেনস্কি পেরেছেন, মোদি পারল না। আসলে কোনও যুদ্ধই হয়নি। ব্যাপারটা প্রায় হাস্যকর হয়েছে। ড্রোন এদিক থেকে ওদিকে গিয়েছে। দু-একটা মিসাইল এদিক থেকে ওদিকে গিয়েছে। কোনও মেজর তফাৎ হয়নি। এমনকি এটা ভারতবর্ষের কাছে লজ্জার বলেও বর্ণনা করেছেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ।
তৃণমূল সাংসদের এ হেন মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বক্তব্য নিয়ে অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী রোজ সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে একের পর এক তথ্য প্রমাণ গোটা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরছেন। হামলার আগে ও পরের উপগৃহ চিত্র দেখিয়ে প্রতিটি স্থানের পূঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন ভারতের তিন বাহিনীর প্রতিনিধিরা। সেখানে সৌগত রায় কিভাবে বলেন যে ভারত পাকিস্তানকে কোনও শিক্ষাই দিতে পারেননি। অনেকে তো তাঁর শিক্ষাদীক্ষা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কেউ বলছেন বুড়ো বয়েসে মতিভ্রম হয়েছে সৌগত রায়ের। বিরোধী রাজনৈতিকরা দাবি করছেন, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রতিদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রক এবং তিন বাহিনীর প্রতিনিধিরা বক্তব্য রেখেছিলেন। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর তরফেই যা বলার বলা হয়েছে। সেখানে কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ছিলেন না। ফলে সৌগত রায় সেনাবাহিনীকেই কার্যত অপমান করলেন। ভারতীয় সেনাকেই চরম মিথ্যাবাদী বললেন তৃণমূল সাংসদ।
অপারেশন সিঁদুর এবং পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দেওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে পারে বিজেপি, এমনটাই মনে করছে তৃণমূল। মজার বিষয় হল, তৃণমূল নেতৃত্ব সম্প্রতি এক নির্দেশিকা জারি করে দলীয় নেতাদের জানিয়েছেন, আগামী ১৭ এবং ১৮ মে গোটা রাজ্যজুড়ে মিছিল করতে বলা হয়েছে। যাতে জাতীয়তাবাদী আবেগকে হাতিয়ার করে বিজেপি ভোটব্যাঙ্ক কবজা করতে না পারে তাই এই মিছিলে ভারতীয় সেনার অভূতপূর্ব এবং অসমসাহসী ভূমিকা নিয়ে কৃতজ্ঞতা ও প্রমান জানিয়ে মিছিলে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ওই মিছিলে কোনও রাজনৈতিক স্লোগান দেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে বেফাঁস মন্তব্য করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে ভারতীয় সেনাবাহিনীকেই মিথ্যাবাদী প্রমান করতে দেখা গেল।
Discussion about this post