সম্প্রতি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় চাকরি বাতিল হয়েছে ২৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার। দেখা গিয়েছে এই ঘটনায় জড়িয়ে রয়েছে তীব্র দুর্নীতি, এবং যেখানে যোগ্য ও অযোগ্য বাছাই করতে নারাজ এসএসসি ও রাজ্য সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে চাকরি হারা যোগ্য শিক্ষকদের প্রতিশ্রুতি দিতে শুরু করেন। সেখানে তিনি যেমন বিরোধীদের দিকে সমস্ত দায় ঠেলে দিয়েছিলেন তেমনই তিনি জানিয়েছিলেন এই যোগ্য অযোগ্য বাছাই করতে রাজ্য সরকারকে সময়ই দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু সত্যিই কি তাই? প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ নয় বছর, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের তরফে বারংবার রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয় যোগ্য অযোগ্যের তালিকা দেওয়ার জন্য। আদালত এও জানিয়েছিল, তারা কখনোই চায় না যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হয়ে যাক। কিন্তু এই দুর্নীতির সাথে জড়িত অযোগ্যদের আড়াল করতে সেই তালিকা প্রকাশ করেনি শাসক দল। কিন্তু এরপর শেষমেষ যখন শীর্ষ আদালতের রায়ে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হল তখন নতুন গল্পের মাধ্যমে ঘটনার মোড় ঘড়ানোর চেষ্টা চললো।
কিন্তু যারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন অর্থাৎ যোগ্য চাকরি হারে না তাদের এই পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে না পেরে বিক্ষোভ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। তারা এবার চাপ দিতে শুরু করেছে এসএসসি ও শিক্ষামন্ত্রীকে। এরপর এসএসসি ও শিক্ষামন্ত্রী তরফ থেকে জানানো হয়েছিল একুশে এপ্রিল সন্ধে ছয় টায় যোগ্য অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তাদের দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা পার হয়ে যেতেও তালিকা আসেনি। এদিকে চাকরিহারা শিক্ষকেরা অবস্থান নিতে শুরু করেন। এরপর এসএসসির চেয়ারম্যান এর সদনের ভেতরে এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক চলছিল চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিধিনিদলের। এরপর সেই বৈঠকে উঠে আসে আরও একটি নতুন তথ্য তালিকা প্রকাশ না করার পাশাপাশি কমিশনের চেয়ারম্যানের তরফ থেকে জানানো হয় প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাকিদের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এত সহজে কি যোগ্য অযোগ্য চিহ্নিত করা সম্ভব!
চাকরিহারা দের দাবি এই তিনটি কাউন্সেলিং এ দুর্নীতি হয়নি বা এর পরবর্তী কাউন্সেলিং গুলোতে যোগ্য মেধাবী কোন শিক্ষক ছিলেন না এত সহজে কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছে এসএসসি? আবারো প্রশ্ন উঠছে। স্ক্যানড মিরর ইমেজ ওএমআর শিট দেখাতে হবে যেখানে যোগ্য ও যোগ্যদের চিহ্নিত করা সম্ভব।
কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেই প্রমাণিত হয়ে যাবে কতটা দুর্নীতি মিশে রয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এর আগে চাকরিহারা প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্যে ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে এখন আমি কিছু বললে তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা হতে পারে৷ রাজ্য সরকার, এসএসসি নির্দেশের ব্যাখ্যা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে৷ ১৭ তারিখ তার শুনানি আছে৷ আমরা সর্বাত্মক ভাবে রিভিউ পিটিশনও করছি৷ রিভিউ পিটিশনের ফল নিয়েও আমরা আশাবাদী৷’
কি বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শুনুন
এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যোগ্যদের’ উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা যেন স্কুলে গিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করে দেন। অন্যদিকে ২১শে এপ্রিল এসএসসির দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছে, যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশনে যাবে সরকার। অর্থাৎ,চাকরিহারাদের আশ্বাস পূর্ণ করতে ব্যর্থ এসএসসি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পরও যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করলো না এসএসসি।
Discussion about this post