দিনে দিনে তাপপ্রবাহ ক্রমশ বাড়ছে। এই গরম থেকে মন চায় পাহাড়ে ঘুরে আসতে। পাহাড়ের কথা ভাবলেই বাঙ্গালীর মন চায় দার্জিলিং কিংবা কালিম্পং । এই দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত কার্শিয়াং শহরটি কম চর্চায় থাকলেও , এই শৈলশহরের সৌন্দর্য কম নয়। তাই এই তাপপ্রবাহে শহর ছেড়ে একটু শৈলশহরে ঘুরে আসতেই পারেন। দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩২ কিমি দূরে এই শৈলশহরটি অবস্থিত। তাই দার্জিলিঙের সাথে সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ শহরটিতে ঘুরে আসাই যায়।
কার্শিয়াং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এই শৈলশহর টিকে ‘land of white orchid’ ও বলা হয়ে থাকে। কারণ এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং রাস্তার দু পাশে সাদা অর্কিড এর বাগান একে আরো মনোরম করে তোলে। এছাড়া শহরটি ১৪৫৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ১৮৮০ সাল থেকে ব্রিটিশ শাসকরা এটিকে ভ্রমনের জায়গায় পরিণত করে। অসুস্থদের স্বাস্থ্য ফেরানোর জায়গা হিসেবে এটি প্রসিদ্ধ। কার্শিয়াং এর উচ্চতম স্থান ডাউহিল, বিশ্রামের জন্য দারুণ একটি জায়গা।
কার্শিয়াং এ যা যা দেখতে পারবেনঃ
1.মাকাইবাড়ি টি এস্টেট
2.ডিয়ার পার্ক
3.নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু মিউজিয়াম
4.দার্জিলিং হিমালয়ান মিউজিয়াম
5.ভিক্টোরিয়া বয়েস স্কুল
6.ডাউহিল গার্লস স্কুল
7.ঈগল’স ক্রাগ
8.ডাউহিল এবং ডো হিল পার্ক
9.গিদ্দা পাহাড় ভিউ পয়েন্ট
10.কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টয় ট্রেন রাইড
এছাড়া ও এই শৈল শহরের পাঁচটি বিখ্যাত জায়গায় ঘুরতে পারেন যে স্থান গুলিতে গেলে এই শহরের পুরো আনন্দ নিতে পারবেন, সাথে গোটা কর্শিয়াং এর সব কটি স্থান ভ্রমণ হবে । দেখে নিন এই পাঁচটি জায়গা সমন্ধে খুঁটিনাটি।
1.মকাইবাড়ি চা বাগান
কর্শিয়ান-র একটি বিশেষ জায়গা মকাই বাড়ি চা বাগান। এই স্থানটি সুগন্ধি এবং গুণগত বৈশিষ্ট্য যুক্ত চা এর জন্য বিখ্যাত। এর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্যের টানে বেশিরভাগ পর্যটকরা প্রতি বছর এখানে ভ্রমণে আসে। এবং বাঙ্গালির সাথে এই স্থানের বিশেষ যোগ রয়েছে । ১৮৫২ সালে দার্জিলিং টি কোম্পানির এজেন্ট ক্যাপ্টেন সামলার মকাইবাড়ি টি এস্টেট প্রতিষ্ঠা করার পর ১৮৫৯ সালে গিরিশ চন্দ্র ব্যানার্জি কিনে নিয়েছিলেন বাগানটি। সেই থেকে মকাইবাড়ি টি এস্টেট কখনও বাঙালির হাতছাড়া হয়নি। তাছাড়া এর আরো বিশেষত্ব হল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট বপন করা চা গাছ থেকে তৈরি হয়েছে এই চা। তাই বাঙালি পর্যটক দের ভিড় দেখা যায় শৈল শহরের এই স্থানে।
2.নেতাজি সুভাষচন্দ্র সংগ্রহশালা
দীর্ঘদিন নেতাজি সুভাচন্দ্র বসু এই স্থানে ছিলেন। শহর থেকে গাড়িতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগবে যেতে। একসময় নেতাজি থাকতেন তাই নেতাজির বিভিন্ন রকম জিনিস পত্র এখানে সংগ্রহ করে রাখা আছে। এবং তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সংগ্রহশালা। ব্রিটিশ আমলের সেই বাড়িতে অনেক জিনিসপত্র রাখা আছে।কার্শিয়াং-এর গিদ্দা পাহাড়ে নেতাজি স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিতে এসব মূল্যবান ঐতিহাসিক চিঠি ছাড়া নেতাজির অনেক ছবি আছে। নেতাজি এখানে এসে মর্নিংওয়াক করতে বের হতেন। নেতাজির মর্নিংওয়াকের ছবিও আছে এখানে। বসু পরিবারের সঙ্গে নেতাজির তোলা অনেক ছবিও আছে। তার বাইরে নেতাজির ব্যবহার করা খাট, ড্রেসিং টেবিল, লেখাপড়ার টেবিল, চেয়ার সবই আছে।
3.ইগল্স ক্র্যাগ
এটি মূলত একটি ভিউ পয়েন্ট।এর উপরে দাঁড়ালে উচুঁ সামনের সবুজ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে পাবেন। এমনকি ঈগলের চোখ যত পর্যন্ত যায় এই ভিউ পয়েন্ট টিতে উঠলে আপনি ততদূর পর্যন্ত দর্শন করতে পারবেন।দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ঈগলস ক্র্যাগ। অষ্টভুজাকার পাখির খাঁচার মতো দেখতে ওয়াচ টাওয়ার হল এই ঈগলস ক্র্যাগ। মেঘমুক্ত আকাশে দেখা যায় তুষারাবৃত স্লিপিং বুদ্ধার রেঞ্জ। পাশাপাশি দেখা যাবে শিলিগুড়ি শহর ও অদূরে নেপাল শহর।
4.ডাওহিল
নিজের শিঁরদাঁড়ায় ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যখন ডওহিল যাবেন, তখন আপনার গাড়ি ছুটে চলবে কার্শিয়াংয়ের ভিড়ে ঠাসা হিলকার্ট রোড দিয়ে। নির্বিষ সাপের মতোই গাড়ির পাশে পাশে চলবে ট্রয়ট্রেনের মরচে পড়া লাইন। কার্শিয়াং স্টেশনের কাছে আসা মাত্রই, হিলকার্ট রোড ছেড়ে একটা রাস্তা ডানদিকে উঠতে শুরু করবে আপনার গাড়িটিকে নিয়ে। আপনি দার্জিলিং যাচ্ছেন না জেনে, বিষণ্ণ নয়নে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে হিলকার্ট রোড। মিলিয়ে যাবে বাঁকের আড়ালে। খাড়া পথে যেতে অনিচ্ছুক গাড়ি ক্রুদ্ধ গর্জন করতে করতে ছুটে চলবে কার্শিয়াংয়ের সব থেকে উঁচু পাহাড় ডাওহিলের দিকে।
5.সিটং
কমলালেবুর গ্রাম। দার্জিলিং থেকেও খুবই কাছে। কর্শিয়াং থেকে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা খানেক।মূলত, কমলালেবুর টানেই পর্যটকেরা ভিড় করে উত্তরবঙ্গের এই পাহাড়ি গ্রামে। বছরভর পর্যটকদের আনাগোনাও লেগে থাকে। যদি কমলালেবুই দেখতে চান, তাহলে এই শীতই সিটং যাওয়ার সেরা সময়। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—এই তিন মাসের মধ্যে যে কোনও সময় সিটং গেলেই আপনার মন হবে, এখানে আসা সার্থক হয়েছে।
Discussion about this post