অতি প্রাচিন এই ভারতবর্ষ। কয়েক শতাব্দী ধরে ভারতে একে একে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মন্দির। ঐতিহাসিক দিক থেকে বেশ কয়েকটি মন্দিরের গুরুত্ব অপরিসীম থাকলেও এমন কয়েকটি মন্দির রয়েছে যার রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। রহস্যে ঘেরা এই মন্দিরগুলি সম্পর্কে যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে একাধিক গল্পগাথা জন্ম নিয়েছে। যা এখন প্রায় রূপকথায় পর্যবসিত হয়েছে। এমনই এক রহস্যময় মন্দির রয়েছে মহারাষ্ট্রের আহমদনগর জেলায় হরিশচন্দ্রগড়ে। প্রাচীন এই গুহা মন্দিরের নাম কেদারেশ্বর মন্দির। ভগবান শিবের এই মন্দির প্রাচীনত্বের নিরীখে সঠিক বয়স নির্ধারণ করা কঠিন হলেও রহস্যের দিক থেকে আজও আতর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সহ্যাদ্রি পর্বতমালার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই গুহা মন্দির ৪,৬৭০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই গুহা মন্দিরে একটি স্তম্ব নিয়ে আজও রয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তি। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ঐতিহাতিক মন্দিরের কয়েকটি রহস্য।
হরিশচন্দ্রগড়ের কেদারেশ্বর মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে মৎসপুরাণ, অগ্নিপূরাণ, স্কন্ধপুরানের মতো প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই মন্দির কত প্রাচীন এবং পবিত্র। তবে ইতিহাসবিদদের মধ্যে একাংশ মনে করেন এই গুহা মন্দির নির্মিত হয়েছিল ষষ্ঠ শতকে স্থানীয় কালচুরি রাজবংশের হাতে। তবে হরিশচন্দ্রগড় দূর্গের গুহাগুলি খোদাই করা হয়েছিল আরও পরে সেই একাদশ শতকে। কথিত আছে, ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ঋষিদের মধ্যে অন্যতম চাংদেব এই গুহামন্দিরে অবস্থান করেই বিখ্যাত ধর্মগ্রন্থ তন্ত্রসার রচনা করেছিলেন। কেদারেশ্বর মন্দিরের কাছাকাছি তিনটি গুহা রয়েছে, এরমধ্যে একটিতে রয়েছে কেদারেশ্বর মহাদেবের একটি ৫ ফুট উচ্চতার শিবলিঙ্গ।
এই মন্দির চত্বরে পাহাড়ের গায়ে বেশ কয়েকটি গুহা রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র কয়েকটি আবিস্কার করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই গুহাগুলির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল কেদারেশ্বর শিবের গুহাটি। কারণ এখানেই রয়েছে অত্যাশ্চর্য এক স্থাপত্য। যা ভূ-ভারতে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেদারেশ্বর গুহা হরিশচন্দ্রপুরের ডানদিকে অবস্থিত। গোটা গুহা কোমর সমান বরফঠান্ডা জলে পরিপূর্ণ, আর তার মাধখানে রয়েছে পাঁচ ফুটের একটি শিবলিঙ্গ। গরম আবহাওয়া থাকা সত্বেও এইজল সারাবছর বরফের মতো ঠান্ডা থাকে, যে সেই জল ডিঙিয়ে শিবলিঙ্গের কাছে যাওয়া কার্যত দুঃসাধ্য। তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই জলের আশ্চর্য ক্ষমতা আছে, সেটা হল যে কোনও অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলা।
সবচেয়ে আশ্চর্ষের বিষয় হল, কেদারেশ্বর গুহার শিবলিঙ্গের উপরে এক বিশাল শিলা রয়েছে। আর তার চার কোনে রয়েছে চারটি স্তম্ভ। তবে গোটা গুহা দাঁড়িয়ে আছে একটিমাত্র স্তম্ভের উপর ভর করে। বাকি তিনটি স্তম্ভই নীচের দিকটি ভাঙা এবং মাটি স্পর্ষ করেনি। একটি মাত্র স্তম্ভ মাটিতে ঠেকানো আছে। আর সেটির ওপরই ভর করে দাঁড়িয়ে এই বিশাল গুহামন্দির। ভক্তদের বিশ্বরস এই চারটি স্তম্ভ চারটি যুগের প্রতিনিধিত্ব করছে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি যুগ। তিনটি যুগের অবসান আগেই হয়েছে, তাই তিনটি স্তম্ভ ভেঙে গিয়েছে। চতুর্থ স্তম্ভটি কলি যুগের প্রতীক, এটি ভেঙে গেলেই কলিযুগের অবসান ঘটবে। অনেকেই মনে করেন, কেদারেশ্বর মহাদেব কলিযুগের ভার বহন করছেন এই স্তম্ভের মাধ্যমে। এই স্তম্ভ ভেঙে পড়লেই অবসান হবে কলিযুগের, সেই সঙ্গে ধ্বংস হবে পৃথিবী।
যদিও ভূতত্ত্ববিদরা মনে করেন, কেদারেশ্বর গুহা মন্দির সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক উপায়ে। গুহার প্রবেশপথটি অত্যন্ত সরু, এবং ভিতরে অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। ভগবান শিব এখানে স্বয়ংভূ। সারা বছর এই গুহার ভিতর জল ঢোকে, কিন্তু মন্দিরের গায়ে কোথাও কোনও ছিদ্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভিতরে জল অবিরাম বয়ে চলেছে। এবং কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই জল বরফশিতল থাকে। কেদারেশ্বর মন্দিরটি হরিশচন্দ্রগড় দূর্গের মধ্যেই অবস্থিত। মনে করা হয় আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য এই দূর্গ নির্মিত হয়েছিল। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য এই অঞ্চল অত্যন্ত আকর্ষণীয়
Discussion about this post