অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য…
১লা বৈশাখের ১৫ দিনের মাথায় হয় অক্ষয় তৃতীয়া। সংস্কৃত ভাষায় এই ‘অক্ষয়’ শব্দের অর্থ হল, যার কোনও ক্ষয় হয় না। বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে বাঙালির ঘরে ঘরে অতি সমারোহে পালিত হয় এই অক্ষয় তৃতীয়ার পুজো। নিয়ম অনুযায়ী যারা নববর্ষের দিনে লক্ষ্মী গনেশ পুজো করতে পারেন না, তাঁরা শুক্লপক্ষের এই তিথিতে শ্রীবৃদ্ধির জন্য ধন সম্পদের দেবদেবীকে পুজো করে নতুন খাতার উন্মোচন করে থাকেন। হিন্দু শাস্ত্রে, নববর্ষের পাশাপাশি অক্ষয় তৃতীয়া দিনটিকে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। কিন্তু কেন এই দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করেন হিন্দু ধর্মাবলম্নীরা, তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
পুরাণে কথিত আছে, কৌরবদের কাছে পাশা খেলায় হেরে গিয়েছিল পাণ্ডবরা। তারপরই স্ত্রী দ্রৌপদিকে নিয়ে ১২ বছরের জন্য তারা বনবাস ও পরের এক বছরের জন্য অজ্ঞাতবাস অর্থাৎ লুকিয়ে ছিলেন পঞ্চ পাণ্ডবরা। ১২ বছর বনবাসে থাকাকালীন ফের কৌরবদের চক্রান্তের শিকার হতে হয় তাঁদের। শোনা যায়, কৌরবদের চক্রান্তে দুর্বাসা মুনি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে পাণ্ডবদের আশ্রমে গিয়ে একরাত থাকেন। অতিথি এসেছেন আশ্রমে, কিন্তু তাঁদেরকে ভোজন করানোর জন্য পাণ্ডবদের কাছে ছিল না পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্ন। এদিকে ক্ষুধার্ত মুণির অভিশাপের কথা ভেবে কার্যত পেয়েছিলেন দ্রৌপদী সহ তাঁর পাঁচ স্বামী। ভীতস্থ হয়ে তাঁরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন। ঠিক সেই সময়তেই কৃষ্ণ হাজির হয়ে হাঁড়ির নিচে পড়ে থাকা চালের একটি মাত্র দানা খেয়ে নেন। কৃষ্ণ চালের দানা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্বাসা মুনী ও তাঁর শিষ্যদের ক্ষুধা নিবারণ হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই মুনী দুর্বাসার অভিশাপের হাত থেকে দ্রোপদি ও তাঁর পাঁচ স্বামীকে রক্ষা করেছিলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তারপর থেকেই এই দিনটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করেন হিন্দুরা। অনেকের মতে, এই দিন পরশুরাম জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাই এই দিনটি অত্যন্ত শুভ।
চলতি বছর এই দিনটি পড়েছে, ১০ই মে। বাংলার ২৭ শে বৈশাখ। তিথি অনুযায়ী এই দিনটি শুভক্ষণ শুরু হচ্ছে ভোর ৫টা ৪৪ মিনিট থেকে সমাপ্ত হচ্ছে পরদিন ভোররাত ৪ টে ৪৯ মিনিটে। ধনতেরাসের মতই অক্ষয় তৃতীয়াতেও অনেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সোনা, রুপো কিনে থাকেন। তাই শ্রীবৃদ্ধির জন্য সোনা, রুপো কেনার শুভ সময় ১০ ই মে ভোর ৫টা ৩৩ মিনিট থেকে শুরু করে যা চলবে মাঝ রাত ১২ টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে সম্পদের দেবদেবীকে শুধু ব্যবসায়ীরাই পুজো করেন তা কিন্তু নয়। অনেকে সংসারে শ্রীবৃদ্ধির জন্যেও এই দিনে লক্ষ্মী গণেশের পুজো করে থাকেন।।
Discussion about this post