ভারতীয় সমাজে যৌনতা আজও বন্ধ দরজার ওপারে। এমনকি যৌনতা নিয়ে কথাবার্তাতেও রয়েছে নানান ছুতমার্গ। তা বলে কি ভারতে যৌনতা নিয়ে চর্চা হয় না? আলবাত হয়। খাজুরাহো থেকে শুরু করে কোনার্কের মন্দিরে পাথরে খোদাই করা ভাস্কর্য বা প্রাচীনকালে লেখা বাৎসায়নের কামসূত্র যুগ যুগ ধরে গোটা বিশ্বকে যৌনতার পাঠ দিয়ে আসছে। ভারতের বর্তমান প্রজন্ম কিন্তু যৌনতা নিয়ে এত রাখঢাকে বিশ্বাস করে না। এর বড় প্রমান হল ভারতে কন্ডোম বিক্রির হার। যদিও কন্ডোম নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে এখনও ‘মানা’।
গত কয়েক বছরে দেশে কন্ডোমের বাজার যে বহরে বেড়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর বিগত ২-৩ বছরে সব বাঁধা, রাখঢাক ঘুচিয়ে দিয়েছে ব্লিঙ্কিটের মতো অনলাইন ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মগুলি। কিন্তু আজ আমরা গল্প বলবো এক কন্ডোম প্রস্তুতকারী সংস্থার উত্থান নিয়ে। বিশেষ করে ওই সংস্থার মালিকের জীবনের গল্প শোনাবো। যিনি একসময় দোরে দোরে ঘুরেছেন। কিন্তু মাত্র চার টাকায় কন্ডোম তৈরি করে তিনি আজ বদলে ফেলেছেন নিজের ভাগ্য। ঘুচিয়ে দিয়েছেন ভারতীয়দের যৌনতা প্রসঙ্গে যাবতীয় রাখঢাক।
ভারতে কন্ডোমের বাজারে সবচেয়ে নামি কয়েকটি ব্র্যান্ড হল ম্যানফোর্স, কামসূত্র, ডিউরেক্স। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হল ম্যানফোর্স। এই কন্ডোম আসলে তৈরি করে ম্যানকাইন্ড ফার্মা। দুই ভাই যৌথ উদ্যোগে এই কোম্পানি চালু করেছিলেন। মাত্র ৮ টাকায় কন্ডোম বিক্রি শুরু করে আজ ৮,৭৫০কোটি টাকার এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করেছেন তাঁরা। মূলত জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষিত যৌনতার অন্যতম উপকরণ হল কন্ডোম। আর এই বস্তুটি তৈরি করেই কোটি কোটি টাকার ব্যবসা আজ তৈরি করে ফেলেছেন তাঁরা। ১৯৯৫ সালে রমেশ জুনেজা এবং রাজেশ জুনেজা ম্যানকাইন্ড ফার্মা শুরু করেছিলেন। প্রথম ১২ বছর এই সংস্থা নানারকম ওষুধ তৈরি করতো। কিন্তু ২০০৭ সালে রমেশ ও রাজেশ জুনজার এক সিদ্ধান্ত বদলে দেয় তাঁদের ভাগ্য। খুব কম দামে তাঁরা বাজারে কন্ডোম নিয়ে আসেন। আর তাতেই বাজিমাত করে তাঁরা। ম্যানফোর্স ব্র্যান্ডনেমের এই কন্ডোম দ্রুতই বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। আর তাতেই চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকে ম্যানকাইন্ড ফার্মার মুনাফা।
বিখ্যাত অর্থনৈতিক ম্যাগাজিন ফোবর্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রমেশ এবং রাজেশ জুনেজার বর্তমান সম্পত্তির পরিমান প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার। যা ভারতীয় মুদ্রায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। উল্লেখ্য, গত বছর ম্যানকাইন্ড ফার্মা তাঁদের আইপিও নিয়ে আসে। ফলে আরও দ্রুত তাঁদের সম্পত্তি বাড়তে শুরু করেছে। অপরদিকে, ভারতে বর্তমান কন্ডোমের বাজারে ম্যানফোর্সের মার্কেট শেয়ার প্রায় ৩৩ শতাংশ। সেখানে ডিউরেক্স এহং কামাসূত্রের মার্কেট শেয়ার ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ম্যানফোর্সের জনপ্রিয়তা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে তাঁরা বিভিন্ন ফ্লেভারের কন্ডোম বাজারে এনে আরও জনপ্রিয় হয়েছে। লাগাতার বিজ্ঞাপন এবং প্রচারের দৌলতে ম্যানফোর্স কন্ডোম আজ ভারতীয় রক্ষণশীল সমাজের যাবতীয় ট্যাবু ভেঙে ছাড়খার করে দিয়েছে বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। আর নিজেদের উদ্ভোবনী চিন্তা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায় আজ রমেশ এবং রাজেশ জুনেজা ভারতের ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি মহলে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছেন। শুধুমাত্র কন্ডোম বিক্রি করেই তৈরি করেছেন এক বিশাল ব্যবসায়ীক সাম্রাজ্য।
Discussion about this post