বলা হয় বাবা-মা হল সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা বাবা-মার কাছ থেকেই লাভ হয়। তাই ছোট থেকে সন্তানকে খুব গুরু দ্বায়িত্বের সাথে বড়ো করা দরকার। কারণ শিশুরা খালি হয়ে থাকা পাত্রের মতন, তাদেরকে যে ভাবে ভরা হয় তারা সেই ভাবেই তৈরি হয়। তাই সন্তান বড়ো করার ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। কিন্তু এখন আধুনিক সমাজে রোজ দাম্পত্য কলহ, সাংসারিক অশান্তি, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য, ব্যস্ত জীবন-যাপন এই সমস্ত কারণে আমরা শিশুর প্রতি বিশেষ মনোযোগী হইনা। আমাদের নিজেদের জীবন ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে সন্তানকে সময় দিতে পারিনা। এখন বেশিরভাগ মায়েরা কর্মজীবী, ব্যস্ত জীবন যাপনের অভ্যস্ত তারা, ফলে সন্তান ঠিক মতন মানুষ হচ্ছে কিনা, ঠিক মতন তার প্রাথমিক শিক্ষা পাচ্ছে কিনা, তার ব্যবহার, আচার আচরণে সাংসারিক অশান্তির কোনো ছাপ পড়ছে কিনা, সে বিষয়ে আমরা বিশেষ মনোযোগী হতে ভুলে যাই। বিশেষ করে এখন সম্পর্কের সমীকরণ শেষ হচ্ছে বিচ্ছেদে। ডিভোর্সের বা বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাবা – মায়ের আলাদা হয়ে যাওয়া সন্তানের জীবনে ভীষন প্রভাব ফেলে। আইনি ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে দম্পতিরা তো দুজনে আলাদা হতে যান, কিন্তু মাঝে পরে থাকে পরিবারের খুদে সদস্যটি। তাকে মায়ের কাছে রাখা হবে কিনা বাবার কাছে, তাই নিয়ে শুরু হয় জোর তোড়জোড়। স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের শৈশব এই টানাপোড়েনে নষ্ট হয়। এই দায় কার ? যে কোনো একজনের, নাকি দুজনের ?
প্রথমেই যে বিষয়টি উঠে আসে যে, হঠাৎ করে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে কিন্তু সন্তানকে কেউ জানাতে পারছেননা যে তারা আর একসাথে থাকতে পারবেননা । শিশুকে এই বিষয়টি জানানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ তাদের শিশুমন এইসব বিষয়ে বোঝেনা যার ফলে, একটা বিশেষ খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তবে কঠিন হলেও এই বিষয়টি সন্তানকে এক না এক দিন বলতেই হবে, কঠিন সত্যের মুখোমুখি তাদেরকেও আনতে হবে। তাই শান্ত মাথায় তার সাথে বিষয়টি আলোচনা করুন। আবেগপ্রবণ হয়ে না পড়ে সন্তানকে বোঝাতে হবে যে তারা(দম্পতি) একসাথে ভালো নেই, তাই আপাতত তারা আলাদা থাকবেন। তবে সে(শিশুটি) কারুর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না।
বিচ্ছেদের প্রভাব সন্তানের উপর
সন্তান যদি ছোট থাকে তবে তারা বাবা – মাকে একসাথে না দেখতে পেলে এর একটা মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব তাদের শিশু মনে পড়ে। তাদের শৈশব নষ্ট হয়ে পরে। মানসিক ভাবে তারাও ভেঙে পড়তে পারে, তাছাড়া তাদের দৈনন্দিন রুটিন বদলে যেতে পারে।
সন্তান যদি কিছুটা বড়ো হয়ে যায় তবে বিচ্ছেদের প্রভাব তাদের সামাজিক জীবনে পড়ে। তাদের বন্ধু, বান্ধব, গৃহশিক্ষক, স্কুল শিক্ষক, সবাই কি প্রশ্ন করবে, এবং সে সেই প্রশ্নের কি জবাব দেবে এই ভয় সব সময় তাড়া করে তাদেরকে। মান-সম্মান নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ তাদের জীবনেও জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে সন্তান যদি একটু বড় হয়ে যায় তবে সে অনেকটাই বুঝতে পারে। তখন সে যদি পড়াশুনো করে তবে তার পড়াশুনো অর্থাৎ শিক্ষায় একটা প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া পরিবারের একসাথে সবাই মিলে থাকা এর থেকে বঞ্চিত হতে পারে । বিশেষ করে পরিবারের প্রতি তার খুব বেশি সুখকর স্মৃতি থাকেনা।
বিচ্ছেদের পর অভিভাবকদের মানসিকতা
এখন বিবাহ বিচ্ছেদ খুব আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয়। সচারচর এমন হতেই থাকছে। ভারতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার গত ৫ বছরে ভীষন ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিচ্ছেদ হলেও সন্তানকে সুস্থ ভাবে গড়ে তুলুন। সন্তানের জীবনে যাতে এর কোনো প্রভাব না পড়ে সে দিকে দুজনেই নজর দিন। বিশেষ করে সন্তানের দ্বায়িত্বে যিনি থাকবেন তাকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের বদলে সন্তানের দিকটা বিশেষ ভাবে দেখতে হবে। আসলে স্বামী – স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলেও বাবা – মায়ের পরিচয়টা যে বদলায় না, সেটা সন্তানকে বড় করার সময় মাথায় রাখা জরুরি।
Discussion about this post