২০১৯ ছিল ১৮ টি আসন। অষ্টদশ লোকসভা ভোটে ১৮ থেকে নেমে মাত্র ১২ টি আসন পেল বিজেপি। কেন? উঠে আসছে সম্ভাব্য নানা কারণ।ইস বার ৪০০ পার। পাল্টা বাংলার দিদি বলেছিলেন ইস বার পগারপাড়। নাহ পগারপাড় হয়তো হয়নি। তবে ভারতীয় জনতা পার্টিকে থেমে যেতে হয়েছে ৪০০ র বহু আগে। এক্সিট পোলের যাবতীয় রিপোর্টকে মিথ্যে করে ৪০০ তো দুর ২৫০ এর গণ্ডি এই বছর টপকাতে পারেনি বিজেপি। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের অনুমানও মিথ্যে হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র, বাংলা, ইউপিতে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। আর তাতেই হু হু করে নেমেছে বিজেপির আসন। ভোট মরশুমে সর্ব ভারতীয়স্তরে বিজেপি নেতাদের বাংলায় বারে বারে আনাগোনা স্পষ্ট করেছিল বাংলাকে পাখির চোখ করা হয়েছে। দুর্নীতি, সন্দেশখালি মত হাতেগরমে ইস্যুও ছিল বিজেপির হাতে। পাশাপাশি ছিল মোদীর সর্ব ভারতীয় প্রতিশ্রুতি। যেমন ৫ বছর রেশন ফ্রি, ৭০ বছরের উর্ধ্বদের আয়ুষ্মাণ যোজনার সুবিধা, অভিন্ন দেওয়ানি আইন, এক দেশ এক ভোট। ভোটের ফল ঘোষণা হতেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান মোদীর প্রতিশ্রুতি তথা গ্যারান্টি কাজে দেয়নি বাংলায়। বাংলার মানুষ লোকসভা ভোটেও আঞ্চলিক সমস্যাগুলির উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে। যেমন জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, বেকারত্বের জ্বালা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাংলায় বিজেপির হারের কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে আমরা আলোকপাত করব
বঙ্গ বিজেপির হারের সম্ভাব্য কারণ
১. ২০২১ এ তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপিতে ভেড়েন শুভেন্দু অধিকারী। অনেকেই মনে করছেন, শুভেন্দুর উপর অধিক নির্ভরতা হারের অন্যতম কারণ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেন শুভেন্দুর কথার উপরে বেশি ভরসা করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিজেপির অন্দরে।
২. বাংলায় কী ভাবে ভোট হবে, কোন কোন বিষয়ে প্রচারে জোর দেওয়া হবে, সবই ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য নেতাদের ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র ‘হ্যাঁ’-তে ‘হ্যাঁ’ মেলানো। এমন হারের পরেও রাজ্য বিজেপির মতামত শোনা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন রাজ্যস্তরে দলীয় নেতাদের একাংশ। বর্তমান বিজেপির যা সংস্কৃতি, তাতে অমিত শাহ যে কারণ বলবেন, যে পথে হাঁটতে বলবেন, সেটাই শিরোধার্য করে নিতে হবে।
৩. ২০১৪ ও ২০১৯ সালের ভোটে ছিল প্রবল মোদী হাওয়া। এ বার সেই হাওয়া না থাকাতেই রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকট হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের পরে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁদের অনেককে রেখে দেওয়া, অনেক যোগ্যকে বাদ দেওয়াও হারের বড় কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
৪. বিজেপির নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য নেতারা প্রস্তাব করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বারে একগুচ্ছ বাইরের লোককে টিকিট দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে কৃষ্ণনগরে ‘রানিমা’ অমৃতা রায় যেমন রয়েছেন, তেমনই সন্দেশখালির গৃহবধূ রেখা পাত্রও রয়েছেন। দলের একাংশের বক্তব্য, এঁদের প্রার্থী না করে দলের নেতাদের লড়তে দিলে মানুষের সমর্থনের আগে দলের কর্মীদের সমর্থন বেশি মিলত। যাতে জয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়তো বলে মনে করা হচ্ছে।
এইসব সম্ভাব্য কারণগুলি ছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যার অন্যতম দলীয় প্রার্থীদের আসন বদল। যেমন দিলীপ ঘোষকে আচমকা মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেওয়া। সারা বছর যিনি মেদিনীপুরের জন্য খাটলেন, মেদিনীপুরের জমিকে চাষযোগ্য করে তুললেন তাকেই কিনা সরিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু কেন, কোন যুক্তিতে। প্রসঙ্গ উঠতেই নেপথ্যের কারণ হিসেবে কাঠিবাজিকেই দুষিয়েছেন দিলীপ। নাম না করলেও নিশানায় যে শুভেন্দু, আপাতত তা একেবারে জলের মতই স্পষ্ট।
Discussion about this post