মহাভারতের পাতায় নয়, বাস্তবে ব্যারাকপুরের মাটিতে অর্জুন বনাম অর্জুন থুড়ি পার্থ ভৌমিকের লড়াই। জেলা রাজনীতিতে অর্জুনের প্রতিপক্ষ এখন কম নয়। চক্রব্যুহ ভেদ করে অর্জুন কি পারবেন নিজের গড় ধরে রাখতে। কুরু-পাণ্ডবদের যুদ্ধে প্রকৃত নায়ক কে তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে সাধারণত মনে করা হয়ে থাকে কুরুক্ষেত্রের ময়দানে এক ও অদ্বিতীয় নায়ক একজনই, তিনি অর্জুন। তিনি ধনঞ্জয়। তিনি আবার পার্থ। সুদুর মহাভারত থেকে যদি বাংলার রাজনীতির ময়দানে ফোকাস করা যায় সেখানেও পার্থ-অর্জুন বিদ্যমান। তবে তারা অভিন্ন কোন সত্ত্বা নয়। রাজনীতির মঞ্চে তারা দুই ভিন্ন গোত্রের, ভিন্ন রঙের। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক ও অন্যজন বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং। ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদের নাম মহাভারতের চরিত্রের সঙ্গে মিলে গেলেও আদতে তিনি অর্জুনই নন। বরং তার চরিত্র ও পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকটাই খাপ খায় অর্জুন পুত্র অভিমন্যুর। সম্প্রতি এই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। কার্যত শাসকদলের মন্ত্রীর অভিমন্যু তকমা মানতে চাননি অর্জুন সিং। কেন তিনি অভিমন্যু নন, তিনি অর্জুন। তার নেপথ্যে যুক্তিও তুলে ধরে ছিলেন বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে।
এত প্রশ্ন, এত তকমা, তা একটাই কারণে। সামনে লোকসভা ভোট। পুরনো দল তৃণমূল অর্জুন সিংকে টিকিট দেয়নি। তবে দল বদল করে এবারও বিজেপির টিকিট পেয়েছেন অর্জুন সিং। ভাটপাড়ার নেতাকে একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ বললেও হয়তো কম বলা হয়। রাজনীতিতে তাঁর উত্থান ও ক্ষমতা ধরের রাখার লড়াই অনেক তাবড় নেতাকে চমকে দিতে বাধ্য। এই অর্জুন সিংয়ের কংগ্রেসের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে প্রথম নির্বাচনে লড়াই। লড়াই জিতে হয়েছিলেন ভাটপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর। এরপরে তৃণমূলে যোগদান। ২০০১ সাল থেকে টানা চারবার ভাটপাড়ার বিধায়ক। দলের হয়ে সামলেছেন বহু গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব।
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, পাঞ্জাব তৃণমূলের স্টেট ইনচার্জও ছিলেন। হয়েছিলেন ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান। ভাটপাড়া, জগদ্দল অর্জুন গড় হিসেবেই পরিচিত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির জল ক্রমশই ঘোলা হয়েছে। মাঝে দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে ভিড়ে ছিলেন অর্জুন। ফিরেও এসেছিলেন তৃণমূলে। আসন্ন নির্বাচনে ফের দল বদল। তিনি এখন বিজেপি প্রার্থী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্জুনের বিপক্ষ তালিকায় বিরোধী গোষ্ঠীর নাম চওড়া হয়েছে। সুবোধ, সোমনাথ, পার্থ সকলেই এখন অর্জুন বিরোধী।
মাঝে একা অর্জুনের লড়াই। শুধু লড়াই বললে ভুল হবে। প্রেস্টিজ ফাইট। এখন প্রশ্ন এই চক্রব্যুহ ভেদ করে কি অর্জুন পারবেন তাঁর গড় টিকিয়ে রাখতে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, প্রার্থী যখন অর্জুন সিং তখন শেষ মুহুর্তে গিয়ে কি হবে, তা বলাই কঠিন।
Discussion about this post