দিলীপের হাতে দলের রাশ থাকাকালীন গত লোকসভা ভোটে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে সুকান্ত কি জয়ের গরিমা ধরে রাখতে পারবেন? তবে অনেকেরই ধারনা বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে বাংলার রাজনীতিতে সুকান্ত উপস্থিতি অনেকটাই ফিকে।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ভালো ফল করেছিল বিজেপি। সেবার উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আসনেই ফুটেছিল পদ্ম। সে সময় বাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্বে দিলীপ ঘোষ। আজকের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু তখন শাসক শিবিরের নেতা। অন্যদিকে সুকান্ত মজুমদারের সদ্য আগমন হয়েছে রাজনীতিতে। ২০১৯ এর ভোট দিয়েই বাংলার রাজনীতিতে খাতায় কলমে তার প্রবেশ। বিজেপির মুখ বলতে সেই সময় বাংলার ভোটাররা চিনতেন দিলীপকেই। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের পর পরিস্থিতি অনেকটাই গেল বদলে।
২০০ র টার্গেট নিয়ে তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি বিজেপি। মাত্র ৭৭ আসন পেয়ে বিধানসভা ভোটে থেমে গিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের বিজয়রথ। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট বছরে বাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় দিলীপ ঘোষকে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদ ধরিয়ে তাঁকে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতী দেওয়া হয়। একই সঙ্গে রাজনীতিতে সেইভাবে অভিজ্ঞ নন, সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতির পদে আনা হয়। এদিকে ততদিনে ফুল বদলে বিজেপিতে ভিড়েছেন শুভেন্দু। পেয়েছেন বিরোধী দলনেতার তকমা।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি হিসেবে প্রায় আড়াই বছর কাটিয়ে ফেলেছেন সুকান্ত মজুমদার। তবে অনেকের মতে দিলীপ ঘোষের মত রাজ্য বিজেপির মুখ হয়ে উঠতে পারেননি। বরং সুকান্ত মজুমদার রাজ্য বিজেপির সভাপতি থাকাকালীন দলের মধ্যে গোষ্ঠী বিবাদ উঠে এসেছে বারংবার। প্রচারের মঞ্চে শুভেন্দু ও সুকান্তকে প্রায়শই একসঙ্গে দেখা গেলেও তাদের সম্পর্ক যে অতি মধুর নয়। এমন খবরও উঠে আসে। দলে নতুন সদস্যের যোগদান থেকে রাজ্যের শাসকদলের বিরোধিতা। শুভেন্দুর থেকে কয়েক পা ব্যাকফুটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি, দলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় সেক্ষেত্রে শুভেন্দুর মতামতকেই অধিক প্রাধান্য দিয়েছে দিল্লির নেতারা।
১৯ শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে লোকসভা ভোট। দল এবারও সুকান্তকে বালুরঘাট থেকে টিকিট দিয়েছে। জন সংযোগ স্থাপনে সম্প্রতি প্রচারে বেড়িয়ে ছিলেন সুকান্ত। সেখানে তাকে পড়তে হয় এক ভোটারের ক্ষোভের মুখে। প্রার্থীকে সামনে পেয়ে তার স্পষ্টত জিজ্ঞাস্য, কেন গ্যাসের দাম এত বাড়ছে। উত্তর দিতে পারেননি সুকান্ত। বরং ভোটারকে চুপ করাতে ইলেকট্রিক বিল নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন।
ভোট আসতেই বাংলায় বার বার প্রচারে এসেছেন মোদী। ইতিমধ্যে ৬ বার বঙ্গ সফর হয়ে গিয়েছে তাঁর। মোদী সফরের মাঝে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বুনিয়াদপুরে বিজেপির বিজয় সংকল্প সভায় অংশগ্রহন অমিত শাহের। একই সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী সুকান্তর হয়ে প্রচার সারবেন। শুধু অমিত শাহই নন আগামী ১৬ তারিখ বালুরঘাটে আসছেন মোদী। সুকান্তর হয়ে প্রচার করবেন। আর এখানেই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।
সুকান্ত রাজ্য বিজেপির অতি গুরু দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও কেন তার জন্য বার বার প্রচারে আসতে হচ্ছে মোদী-শাহকে? তিনি একজন রাজ্য সভাপতি। তিনি নিজেই তো রাজ্য বিজেপির মুখ। তবে কেন তার হয়ে জন সংযোগে বার বার তারকা প্রচারকদের মুখ ব্যবহার করতে হচ্ছে। রাজ্য সভাপতির পদে থাকা সত্ত্বেও বাংলার রাজনীতিতে সুকান্তর পায়ের তলার মাটি বেশ নড়বড়ে। এতে কি সেই কথাই প্রমাণিত হচ্ছে না? অনেকে আবার বলছেন রাজ্যসভাপতি হিসেবে সুকান্তর এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি।
Discussion about this post