এশীয় শক্তি সূচক সম্প্রতি ২৭টি দেশ নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে জানানো হয়েছে, ভারত জাপানকে হটিয়ে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষমতার নীরিখে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ফলে ভারত যে দ্রুত বিশ্বের এক প্রবল ক্ষমতাশালী দেশে পরিনত হচ্ছে, তা এক কথায় সঠিক। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মতো অতি ক্ষুদ্র এক দেশ, যেখানে কার্যত আইনের শাসন নেই, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নেই, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নেই, তাঁরা ক্র্মাগত ভারতকে হুমকি দিয়ে চলেছে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য, যা সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন কট্টরপন্থী মৌলবাদী সংগঠনের নেতারা হুমকি দিচ্ছেন এই সেভেন সিস্টার্স দখল নেবেন। আবার কখনও হুমকি আসছে সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডোরে হামলা চালানো হবে। আবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর লাগাতার নির্যাতন চালানো, হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের ভুঁয়ো মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে বারংবার ভারতকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যে তাঁরা ভারতের কথায় পাত্তা দিতে নারাজ। অথচ, বাংলাদেশের সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি ভারতের থেকে কয়েক গুণ কম। ফলে এই মুহুর্তে ভারত যদি বাংলাদেশে কোনও সামরিক অভিযান চালায়, তাহলে ধোপেই টিকবে না সে দেশের সেনাবাহিনী। আসুন এই বিষয়ে একটা তুল্যমূল্য আলোচনা করা যাক।
সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সন্নাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার প্রতিবাদে সে দেশের হিন্দুদের প্রতিবাদ নিয়ে শুরু হয়েছে ভারত এবং বাংলদেশের মধ্যে চাপানউতোর। এরমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বেলঘড়িয়া অঞ্চল থেকে এক যুবক বাংলাদেশে গিয়েছিলেন সেখানে তাঁর বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে। কিন্তু সেখানে যখন ভারত থেকে যাওয়া যুবকের পরিচয় জানতে পারেন, তখন তাঁকে বেধড়ক মারধোর করা হয়েছে। কোনও রকমে সে পালিয়ে ভারতে ফেরে। বুধবার সেই যুবকের বাড়িতে দেখা করতে যান ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। সেখানে বসেই তিনি দাবি করেন, ভারত সরকারের উচিত অবিলম্বে সেনা পাঠিয়ে বাংলাদেশের হিন্দু প্রধান এলাকা দখল নিয়ে একটা স্বাধীন হিন্দু রাষ্ট্র করে দেওয়া।
এই দাবি যে শুধু অর্জুন সিংয়ের মতো প্রাক্তন সাংসদদের নয়, আরও অনেকে এই দাবি তুলছেন। এমনকি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেটের কিছু হিন্দু প্রধান এলাকার মানুষও এই দাবি তুলছেন। তাহলে কি ভারত এই পদক্ষেপ করবে? আর যদি ভারত বাংলাদেশে আক্রমণ করে তাহলে সেই দেশের সেনাবাহিনী কী পারবে তা ঠেকাতে? রিপোর্ট অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীগুলির মোট জওয়ান সংখ্যার নিরিখে বিশ্বে ভারতই এক নম্বরে। ভারতের মোট সামরিক সদস্যের সংখ্যা ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০ জন। দ্বিতীয় স্থানে আছে রাশিয়া, ৩৫ লক্ষ ৭০ হাজার। তৃতীয় স্থানে চিন, ৩১ লক্ষ ৭০ হাজার। তবে ভারতের সক্রিয় জওয়ানের সংখ্যা, ১৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন। চিনের থেকে যা সমান্য কম। অপরদিকে, ভারতের বায়ুসেনা কর্মীর মোট সংখ্যা, ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৫৭৫ জন। আর নৌসেনা সদস্যর সংখ্যা, ১ লক্ষ ৪২ হাজার ২৫২ জন। সেখানে চলতি বছর বিশ্বে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে ৩৭তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪০তম। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে সক্রিয় সেনা রয়েছেন আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার। নৌবাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনুমানিক ২৫ হাজার ১০০। অপরদিকে, বাংলাদেশের বিমানবাহিনীতে আনুমানিক ১৭ হাজার ৪০০ জন বিমানসেনা রয়েছেন।
ভারতের হাতে এমনিতেই অগ্নি, পৃথ্বী, নাগ, আকাশ ও ত্রিশূল, এই পাঁচ মারাত্মক বিধ্বংশী ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শক্তিশালী ব্রাক্ষ্মস ও পিনাকা মিশাইল সিস্টেম। অগ্নি-৫ মিশাইলের পাল্লা ৫০০০ কিলোমিটার ও অগ্নি-৪ মিশাইলের পাল্লা ৪০০০ কিলোমিটার। অপরদিকে, বাংলাদেশ সম্প্রতি চিন থেকে কয়েকটি ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। তবে কতগুলি কেনা হয়েছে, তাঁদের পাল্লা কত তা জানানো হয়নি। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মানববিহীন ড্রোন ও মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম কেনা হয়েছে তুরস্ক থেকে। পাশাপাশি নৌবাহিনীর জাহাজগুলোর মধ্যে সাতটি ফ্রিগেট, ছয়টি করভেট ও দুটি সাবমেরিন রয়েছে। তবে বাংলাদেশের হাতে কোনও ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, বিমানবাহী রণতরি ও হেলিকপ্টারবাহী রণতরি নেই। সেনাবাহিনীতে ট্যাংকের সংখ্যা ১২০০। সামরিক যান রয়েছে ১৩ হাজার ১০০টি। সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি রয়েছে ২৭টি। এছাড়া খবর পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকার পাকিস্তান থেকে অত্যাধুনিক জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান এবং সাহিন-১ ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে আগ্রহী। তবে সেগুলি কবে বাংলাদেশ সেনার হাতে আসবে তা ঠিক নেই।
Discussion about this post