২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকে অনেককেই প্রার্থী করেছিল। কিন্তু ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য হারে সেই সংখ্যা কমেছে। রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো পরিসংখ্যান। জাতীয় রাজনীতিতে ভারতীয় জনতা পার্টি বরাবরই হিন্দুত্বের ওপর ভরসা করে ভোটে লড়ে। ফলে তাঁদের প্রার্থী তালিকায় মুসলিম প্রার্থীদের দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়। তুলনায় তথাকথিত বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, এনসিপি অথবা বাম দলগুলি অনেক বেশি মুসলিম প্রার্থীকে টিকিট দিতে দেখা যায়। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটে তা দেখা গেল না। যা নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে।
পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১১৯ জন। এটাই এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮-এ। উল্লেখযোগ্যভাবে এই ৭৮ জনের মধ্যে বহুজন সমাজবাদী পার্টির মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। অর্থাৎ, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল, এনসিপি বা বামফ্রন্টের মতো প্রথমসারির বিরোধী দলগুলির মোট মুসলিম প্রার্থী মোটে ৪৩ জন। আর বিজেপি এবার গোটা দেশে একজন মুসলিমকে টিকিট দিয়েছিল। এবং তাঁদের সহযোগী নিতীশ কুমারের জেডিইউ বিহারে একজনকে টিকিট দিয়েছিল। উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসও এবারের লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪২ লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র ৬টিতে মুসলিম প্রার্থী করেছিল। তাঁদের মধ্যে ৫ জনই জিতেছেন। জঙ্গিপুর আসনে খলিলুর রহমান, বহরমপুরে ইউসুফ পাঠান, মুর্শিদাবাদে আবু তাহের খান, বসিরহাটে হাজি নুরুল ইসলাম এবং উলুবেড়িয়া থেকে জিতেছেন সাজদা আহমেদ। আর মালদা দক্ষিণে হেরে গিয়েছেন সেহনওয়াজ আলি রেহান। তৃণমূলের একমাত্র মহিলা মুসলিম প্রার্থী সাজদা আহমেদ।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে ১১৯ জনের মধ্যে মাত্র ২৬ জন মুসলিম প্রার্থী জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। এদের মধ্যে কংগ্রেস এবং তৃণমূল থেকে চারজন করে। বাকি বিএসপি, এসপি থেকে তিনজন করে এবং এনসিপি ও সিপিআইএমের একজন করে জিতেছিলেন। এছাড়া ন্যাশনাল কংগ্রেস, লোক জনশক্তি পার্টি ও ওআইইউডিএফ থেকে একজন করে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সেই পরিসংখ্যানও ফিঁকে হয়ে গিয়েছে। মাত্র ২৪ জন মুসলিম প্রার্থী ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন এবার। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি মুসলিম প্রার্থী করেছিল বহুজন সমাজবাদী পার্টি, মোট ৩৫ জন। পরিসংখ্যান বলছে তাঁদেরও মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা এবার কমেছে গতবারের তুলনায়। কারণ গত লোকসভায় বিএসপি ৩৯ জন মুসলিমকে টিকিট দিয়েছিল। উল্লেখ্য, এবার বিএসপির একজন মুসলিম প্রার্থীও জিততে পারেননি।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং ধর্মীয় মেরুকরণের জেরে দিন দিন মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা কমছে। বিরোধী শিবিরের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। অর্থাৎ মুসলিম ভোটারে বৃদ্ধি হয়েছে। তবুও মুসলিম প্রার্থী কমছে দেশজুড়েই। ফলে সেই পরিসংখ্যানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংসদে মুসলিম প্রতিনিধিত্বও কমেছে। এতেই সিদুঁরে মেঘ দেখছেন একটি অংশ। কংগ্রেস, তৃণমূল বা সমাজবাদী পার্টির মতো রাজনৈতিক দলগুলি বরাবরই মুসলিমদের জন্য গলা ফাটায়। কিন্তু তাঁদের প্রতিনিধিদের সংসদে পাঠাতে অনীহা দেখাচ্ছে বেশিরভাগ বিরোধী দলই। তবে কি বিজেপির বাড়বাডন্ত ঠেকাতে বিরোধী দলগুলিও এবার হিন্দুভোট নিজেদের বাক্সে টানতে সচেষ্ট হল? এই প্রশ্নই এখন দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দে ঘুরপাক খাচ্ছে।
Discussion about this post