মঙ্গলবার কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে যে জিহাদি হামলা হয়েছে, পাকিস্তানকে তার জবাব দিতে শুরু করল ভারত। পাঁচ ছয়টি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হল, যার মধ্যে অন্যতম সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত। পাকিস্তান কি এবার শুকিয়ে যাবে সিন্ধুর জল না পেয়ে?
VO – পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে দেশের অভ্যন্তরে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা বড় অংশের মানুষ দাবি তুলেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত কড়া পদক্ষেপ করা। মঙ্গলবার কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকার বৈশরণ ভ্যালিতে যে হামলা হয়েছে সেটাকে সন্ত্রাসী হামলা না বলে বরং বলা উচিত জিহাদি হামলা। কারণ এখানে পর্যটকদের ওপর নয়, বরং তাঁদের ধর্ম জেনে তবেই হামলা হয়েছে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে বেছে বেছে হিন্দুদের উপর এই হামলা। অর্থাৎ এই ধরণের ঘটনা কাশ্মীরে এই প্রথম। তাই শুরুতেই এই হামলার পিছনে থাকা মাস্টারমাইন্ডদের চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলি দাবি করছে পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিরা এই ধরণের জিহাদি হামলা করেছে। আর হামলাকারীদের দুজন পাকিস্তানী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ফলে এবার কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পালা। বুধবার রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে কেন্দ্রিয় মন্ত্রিসভার কোর কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।
পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি ও এনআইএ-এর শীর্ষ কর্তারা। সূত্রের খবর, বুধবার মধ্যরাতেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল পাকিস্তানের চার্চ দ্য অ্যাফেয়ার্স সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে। তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ভারতের মনোভাব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। অপরদিকে রাতেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দেয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ও কার্যকরী হল ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করা। ভারত জানিয়েছে, যতদিন না পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে লাগাম টানবে, ততদিন সেই চুক্তি স্থগিত থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের পক্ষে যথেষ্টই কঠোর। বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, “১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা হল। যতক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের প্রতি তার সমর্থন ত্যাগ করে।
অনেকেই ভাবছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক অভিযান না করে এই ধরনের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা পাকিস্তানের কাছে সবচেয়ে বড় ধাক্কা। এই সিন্ধু জল চুক্তি হয়েছিল ১৯৬০ সালে। এরপর থেকে পাকিস্তান ভারতের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা করেছে একাত্তরের যুদ্ধ হয়েছে, কারগিল যুদ্ধ হয়েছে, মুম্বাই ও পুলওয়ামা হামলার মতো বেশ কয়েকটি বড়সড়ো সন্ত্রাসবাদী হামলাও হয়েছে পাক মদতে। কিন্তু ভারত সিন্ধু নদী জল চুক্তি কখনও স্থগিত করেনি। যা কাশ্মীরের পহেলগাঁও আক্রমণের পর হল। উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নয় বছর ধরে আলোচনার পর ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে সিন্ধু জল চুক্তি সম্পন্ন হয়। এই চুক্তিটিতে ১২টি ধারা এবং ৮টি পরিশিষ্ট রয়েছে। চুক্তির বিধান অনুসারে, সিন্ধু নদের “পূর্ব নদী” – শতদ্রু, বিয়াস এবং রাভি – এর সমস্ত জল ভারতের “অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের” জন্য উপলব্ধ থাকবে। পাকিস্তান “পশ্চিম নদী” – সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব – থেকে জল পাবে। এই চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের ফলে সিন্ধু নদী ব্যবস্থার জল কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে এবার নয়া দিল্লির হাতেই ক্ষমতা থাকবে। সিন্ধু নদীর ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ জল পাকিস্তান পেত। এখন ভারত চাইলে সেই পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনতে পারে। এর ফলে পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশে খরা দেখা দিতে পারে। এই সিদ্ধান্ত কার্যত পাকিস্তানকে হিলিয়ে দিয়েছে ভারত।
সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের পাশাপাশি, আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে চলাচল বন্ধ করা, উপযুক্ত নথিপত্র নিয়ে যাঁরা এই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন তাঁদের ১ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করার পাশাপাশি সে দেশের ভারতীয় দূতাবাসের সদস্যসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে। আরও জানা যাচ্ছে ষষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টটি ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরিষ্কার জানিয়েছেন, যে সমস্ত সন্ত্রাসবাদী এই হামলা ঘটিয়েছে এবং যারা এই হামলার ষড়যন্ত্র করেছে, তারা এমন শাস্তি পাবে, যা তাদের কল্পনারও অতীত। অর্থাৎ, ভারত যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় কোনও সামরিক প্রত্যাঘাত নিতে চলেছে, তারই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন নরেন্দ্র মোদি।
Discussion about this post