মঙ্গলবার দিনভর একের পর এক বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নয়া দিল্লির ৭, লোককল্যাণ মার্গ, যা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। সকাল থেকেই সেখানে একের পর এক কনভয় প্রবেশ করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহান, তিন বাহিনীর প্রধান সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌসেনার প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী, এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং প্রমুখের গাড়ি প্রবেশ করেছে একের পর এক। দীর্ঘক্ষণ এই বৈঠক চলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পহেলগাঁওয়ে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, তার পরদিন এমন বৈঠক হয়েছিল নয়া দিল্লিতে। এর এক সপ্তাহ পর ফের বসল বৈঠক। অর্থাৎ আগের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছু হোমওয়ার্ক দিয়েছিলেন প্রত্যেককে। এদিন সেটাই ঝালিয়ে নেওয়া হল।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে মঙ্গলবার একই সঙ্গে আলাদা করে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রধান-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকরা। তারপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হল একটি নজিরবিহীন বৈঠক। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত হাজির হন ৭, লোককল্যাণ মার্গে। জানা যাচ্ছে সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। ফলে আরেকটি একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক চলল প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে। বলে রাখা ভালো সেই ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে যখন এনডিএ গঠন হয়েছিল, তারপর এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে পা রাখলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সাধারণত খুব বড় ঘটনা না ঘটলে সঙ্ঘ প্রধান কোনওদিনই কোনও বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন না। সেই দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মোহন ভাগবতের মধ্যে এই বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বৈঠেকের বিষয়বস্তু নিয়ে খুব একটা কিছু জানা না গেলেও সূত্রের খবর, পহেলগাঁও কাণ্ড নিয়ে সঙ্ঘ প্রধান যারপরনাই ক্ষুব্ধ এবং চটজলদি প্রতিশোধের কথা জানিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদিকে।
এ তো গেল মঙ্গলবারের কর্মকাণ্ড। এবার আসা যাক বুধবারের কর্মকাণ্ড নিয়ে। এদিনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারপর রাজনৈতিক বিষয়ক ক্যাবিনেট বৈঠক ও অর্থনীতি বিষয়ক ক্যাবিনেট বৈঠকও হল। এত তৎপরতা সুদূর অতীতেও খুব একটা দেখা যায়নি। আরও একটি দিক রয়েছে, সেটা হল সেই পুলওয়ামা হামলার পর পূর্ণাঙ্গ ক্যাবিনেট বৈঠক হয়েছিল। তারপর এই পহেলগাঁও হামলার সাতদিন পর বৈঠকে বসলেন ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা। সেবারও আমরা দেখেছিলাম ভারত চরম প্রত্যাঘাত করেছিল পাকিস্তানে। সেবার হয়েছিল বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক। এবার ফের সেই বৈঠক হল, তাহলে কি এবারও? যদিও এর উত্তর সরাসরি ভারত সরকার দেয়নি। কিন্তু নানান ঘটনা ও বৈঠকের ঘনঘটা দেখে আন্দাজ করে নেওয়া সহজ।
এরমধ্যেই জানা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর আসন্ন রাশিয়া সফর বাতিল করেছেন। আগামী ৯ মে মস্কোয় ‘ভিক্ট্রি ডে’ সেলিব্রেশনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু সূত্রের খবর, এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়া সফর বাতিল করেছেন তিনি। সূত্রের খবর, বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার ‘ভিক্ট্রি ডে সেলিব্রেশনে’ যোগ দিচ্ছেন না। যদিও কেন এই সফর বাতিল হল তার আসল কারণ খোলসা করেননি পেসকোভ। তবে ধরেই নেওয়া যায়, পহেলগাঁওয়ে হামলার পর দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই গুরুত্বপূর্ণ সময় ‘বন্ধু’ ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে যাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত আসন্ন, যার জেরেই বাতিল হয়ে গেল নমোর রাশিয়া সফর!
সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, মঙ্গলবারের বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য। তিনি জানিয়েছেন, পহেলগাঁও হামলার জবাব দিতে কোন লক্ষ্যে, কী ভাবে, কখন আঘাত করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে সেনাবাহিনী। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে একপ্রকার গ্রিন সিগন্যাল দিয়েই দিয়েছেন। এবার যুদ্ধের প্রাকমুহূর্তে ভারতের অর্থনীতি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি ঝালিয়ে নিলেন বুধবারের ম্যারাথন বৈঠকে। যেটাই হোক, বড় কোনও পদক্ষেপ যে ভারত নিতে চলেছে, সেটা কার্যত নিশ্চিত অনেকেই। তবে সেটা কবে, কোথায় এবং কিভাবে সেটা জানা সম্ভব নয়।
Discussion about this post