ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বীবেদী একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন করেছেন। নয়াদিল্লীতে অবস্থিত রাইসিনা হিলসে তাঁর কার্যালয় থেকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবিটি সরিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের নিরীখে এই সিদ্ধান্ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সেনা সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। এরপর ভারতীয় সেনার পরাক্রমে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানী সেনা। পাকিস্তানী সেনার তরফে এ এ কে নিয়াজি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাবাহিনীর যুগ্ম কমান্ডার জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার একটি স্থিরচিত্র ভারতীয় সেনাপ্রধানের কার্যালয়ের লাউঞ্জের দেওয়ালে ফ্রেমবন্দি অবস্থায় ছিল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরাক্রম এবং সাফল্যের মূর্ত প্রতীক হিসেবেই ওই ছবি সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে স্থান পেয়েছিল। এবার সেই ছবি সরানো হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকটাই টলমল। তার ওপর বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্বর্ণালী ইতিহাস অস্বীকার করতে চাইছে। তাঁরা ভারতীয় সেনার সেই অপরিসীম ত্যাগ ও পরাক্রমকে অস্বীকার করতে চাইছে। মুক্তিযুদ্ধের নতুন ইতিহাস লিখতে চাইছে, বাংলাদেশের সংবিধান বদলে দিতে চাইছে। ঠিক এই আবহেই সেনাপ্রধানের অফিস থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হল। যা নিয়ে বিতর্ক না হলেও বিতর্কের সূত্রপাত অন্য। কারণ সেই ঐতিহাসিক ছবির বদলে যে ছবিটি লাগানো হল সেটা নিয়েই বিতর্ক।
২৮ মাদ্রাজ রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল টমাস জ্যাকব নতুন ছবিটি এঁকেছেন। যার নাম কর্ম ক্ষে্ত্র বা করম ক্ষেত্র। এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সার্বিক ধর্ম প্রতিফলিত করে। ওই তৈলচিত্রের পটভূমি লাদাখের প্যাংগং লেক। চারপাশে শুভ্র তুষারাবৃত পর্বতে, এক পাশে কৃষ্ণের রথ ও অন্য পাশে চাণক্য। বিস্তৃর্ণ ভূমিতে ভারতীয় সেনার ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, পদাতিক সেনা। আকাশে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার ও ড্রোন। প্যাংগং লেকের জলে নৌসেনার অত্যাধুনিক জলযান। বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ওই তৈলচিত্রে কৃষ্ণের রথ ও চাণক্যের ছবি রাথা নিয়ে। যদিও সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী সব বিতর্ক তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ভগবান কৃষ্ণের রথ এবং হিন্দু রাষ্ট্রনায়ক এবং দার্শনিক চাণক্য কৌশলগত জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে। সেনাপ্রধানের দাবি, এটাও বলা হচ্ছে যে প্যাংগং হ্রদের তীরে একজন গেরুয়া-পরিহিত ব্রাহ্মণ দাঁড়িয়ে আছেন। ভারতীয়রা যদি চাণক্যকে না জানেন, তাহলে তাঁদের উচিত হবে অতীতে ফিরে যাওয়া।
তিনি আরও বলেন, আমাকে যদি অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে সংযুক্ত করতে হয়, নতুন এই চিত্রকর্ম তার প্রতীক। আর পাকিস্তানী সেনার আত্মসমর্পণের পুরোনো স্থিরচিত্র সম্পর্কে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, সেনাপ্রধানের দুটি লাউঞ্জ রয়েছে এবং আত্মসমর্পণ চিত্রটি মানেকশ সেন্টারের লাউঞ্জে রয়েছে। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কৌশলগতভাবে বাংলাদেশকে বিশেষ বার্তা দিতেই পাকিস্তানী সেনার সেই আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ছবি সরিয়ে দিলেন ভারতের সেনাপ্রধান। একদিকে চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদের আবহ, অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের শীতলতা। একটি চালে দুটি দেশকেই বার্তা দিলেন সেনাপ্রধান।
Discussion about this post