২০১০ সালে মুম্বইয়ের বান্দ্রা থেকে ওরলি পর্যন্ত সমুদ্রের উপর তৈরি যে সেতুটি উদ্বোধন হয়েছিল তা দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছিল। আজও সেই আশ্চর্য সুন্দর সড়ক-সেতু দেখতে ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। কিন্তু জানেন কি তারও একশো বছরের বেশি আগে ভারতেই তৈরি হয়েছিল আরেকটি সমুদ্র সেতু। যেটা দিয়ে আবার যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আমরা কথা বলছি তামিলনাড়ুর পাম্বান রেল ব্রিজ নিয়ে। ভারতের স্বাধীনতার আগে ১৯১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হওয়া ওই রেল ব্রিজ ছিল ভারতের একমাত্র সমুদ্র সেতু। পরে তার পাশেই একটি সড়ক-সেতু তৈরি হয়েছিল। এবার শতাব্দীপ্রাচীন পাম্বান রেলসেতুর পাশেই আরেকটি অত্যাধুনিক রেলসেতু তৈরি করছে ভারতীয় রেল। যা হতে চলেছে আরেকটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ময়।
ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে তামিলনাড়ু রাজ্যের রামনাথপুরম জেলার একটি শহর মণ্ডপম। এই শহরের গা ঘেঁষে বঙ্গোপসাগর, অন্যপারে শ্রীলঙ্কার উপকূল। যদিও মণ্ডপমের অদূরে সমুদ্রের মধ্যেই রয়েছে রামেশ্বরম দ্বীপ। যা ভারতেরই অঙ্গ। এই মণ্ডপম থেকে রামেশ্বরম পর্যন্ত সমুদ্রের উপর দিয়ে তৈরি হয়েছিল পাম্বাম সেতু। বিগত একশো বছরে বারবার মেরামত করতে হয়েছে এই রেলসেতু। কারণ সমুদ্রের নোনা আবহাওয়ায় সেতুর ইস্পাতে ক্ষতি হয় দ্রুত। এবার ওই সেতুর পাশেই তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক নতুন আরেকটি রেলসেতু।
পুরোনো পাম্বাম ব্রিজের মাঝখানে একটি অংশ আলাদা হয়ে যেত জাহাজ চলাচলের জন্য। রেললাইন-সহ ওই অংশটি সরে যেত দুই পাশে। মাঝখান দিয়ে জাহাজ চলে যাওয়ার পর ফের জুড়ে যেত দুটি অংশ। নতুন রেলসেতুতে সেটা হবে না। বরং রেললাইন-সহ মাঝের ওই অংশ এবার উপরের দিকে উঠে যাবে। যা আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক অপার বিশ্ময় হতে চলেছে। রেল সূত্রে খবর, ২০২০ সালে এই নতুন রেলব্রিজ নির্মান শুরু হয়। ইতিমধ্যেই ব্রিজের কাজ প্রায় শেষ। মনে করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই নতুন পাম্বান রেলব্রিজের কাজ শেষ হয়ে চালু হয়ে যাবে। ভারতীয় রেল ইতিমধ্যেই নতুন এই রেলসেতুতে লাইট ইঞ্জিনের ট্রায়াল রান সম্মন্ন করেছে। আরও কিছু সুরক্ষা পরীক্ষা সম্মন্ন করার পরই এটির উদ্বোধন করার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
২.৩ কিলোমিটার বিস্তৃত এই রেলব্রিজ নির্মানের জন্য তৈরি হয়েছে ১৪৫টি কংক্রিট পিয়ার। যেগুলি ১৫ মিটার ব্যবধানে বসানো হয়েছে। সেতুটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ মিটার উঁচু। যাতে অনায়াসে ছোট ও মাঝারি মাছধরার নৌকা চলাচল করতে পারে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের অংশটি রয়েছে নতুন পাম্বান রেলসেতুর মাঝামাঝি। যা প্রযুক্তিগত নকশা এবং প্রকৌশলের এক অনন্য কীর্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এই সেতুর মাঝের ৬৩ মিটার অংশ কোনও বাঁধা ছাড়াই ইলেক্ট্রো মেকানিকাল কন্ট্রোলের সাহায্যে উলম্বভাবে ওঠানামা করবে। সেতুর এই অংশের দুই পাশে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সেন্সর, যা কোনও জাহাজের অবস্থান এবং আয়তন মেপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাপতে পারে। আবার কোনও ট্রেন আসছে কিনা সেটাও সহজেই ধরতে পারবে। জানা যাচ্ছে, মাঝের ওই অংশটি উপরের দিকে ওঠানো থাকবে। কোনও ট্রেন এলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেমে আসবে। আবার ট্রেনটি চলে গেলে উঠে যাবে। যাতে বিনা বাঁধায় জাহাজ, মাছ ধরার বড় বড় ট্রলার যাতায়াত করতে পারে।
নতুন পাম্বান রেলব্রিজ ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার নতুন মাইলফলক হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ব্রিজটির নির্মানকাজ শেষ। বেশ কয়েকটি ট্রায়াল রানও সম্পন্ন হয়েছে। এবার রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের চুরান্ত পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে নতুন পাম্বান রেলব্রিজ। যা ভারতের মূল ভূখণ্ড এবং রামেশ্বরমের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়িয়ে দেবে। রামেশ্বরম হল ভারতের জনপ্রিয়তম পর্যটন কেন্দ্র এবং ধর্মীয় স্থান। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী যান রামেশ্বরম। নতুন এই রেলব্রিজ চালু হয়ে গেলে আরও বেশি ট্রেন চালানো হবে। পাশাপাশি পন্য পরিবহনেও গতি আসবে।
Discussion about this post