মাত্র কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের হিন্দু নেতা ভবেশচন্দ্র রায়ের খুনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে ভারত। বাংলাদেশে কেন বারবার হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছে সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সচেতন হওয়ার আর্জিও জানিয়েছিল নয়া দিল্লি। গত শনিবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে জানান, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নেতা শ্রী ভবেশচন্দ্র রায়ের অপহরণ ও খুনের মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। আরও একবার অন্তর্বর্তী সরকারকে হিন্দু সহ সকল সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই’। কিন্তু তার আগেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের অশান্তির আবহে এক ঘটনাও সামনে এসেছিল। গত ১২ এপ্রিল, শনিবার সেই অশান্তিতে প্রাণ হারান শমসেরগঞ্জের হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর পুত্র চন্দন দাস। অভিযোগ, তাঁদের খুন করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছিল হিন্দু বলেই তাঁদের মরতে হয়েছে। এবার ঘটল আরও বড় ঘটনা। মঙ্গলবার কাশ্মীরের পহেলগাওয়ের কাছেই বৈসরণ ভ্যালিতে ঘুরতে গিয়ে বেঘোড়ে প্রাণ হারালেন প্রায় ২৮ জন। যদিও সরকারি মতে ২৬ জন নিহত। সংখ্যা যেটাই হোক, একজন বাদে মৃতদের প্রত্যেককেই বেছে বেছে মারা হয়েছে। কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই হিন্দু। ফলে ইতিমধ্যেই বলা শুরু হয়েছে এটা জঙ্গি হানার আড়ালে পরিকল্পিত হিন্দু নিকেশ।
কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ হামলার কয়েকদিন আগে ১৮ এপ্রিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোটের খাইগালায় এক বিশাল জঙ্গি সমাবেশে প্রকাশ্যে হিংসা ও ‘জিহাদের’ আহ্বান জানিয়েছিল লস্কর-ই-তৈবার এক শীর্ষ নেতা আবু মুসা। তাঁর ভাষণেই উঠে এল বাংলাদেশের হিন্দু নিধনের কথা, একই সঙ্গে উঠে এল কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল-সহ ওয়াকফ আইনের কথাও। সেই সঙ্গে কাশ্মীরেও যে নরেন্দ্র মোদি সরকার ব্যাপকভাবে বসবাসের ছাড়পত্র দিচ্ছে সেটাও। ওই জঙ্গি নেতা পরিস্কার হুমকির সুরে বলছেন, ওরা চায় পুলওয়ামা, পুঞ্চ, রাজৌরিতে ‘রাম রাম’ ধ্বনি উঠুক। লস্কর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। মোদী, আদালতের ঘরে বসে তুমি রায় দাও, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র আমাদের।
পাকিস্তানের জঙ্গি নেতার কথায় উঠেছে বাংলাদেশের প্রসঙ্গও। তিনি বলছেন, আজ সুখবর আসছে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের মারা হচ্ছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের একটা অংশ যে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির নির্দেশেই চলছে সেটা এখন দিনের আলোর মতো পরিস্কার। বাংলাদেশের মতোই কাশ্মীরের পহেলগাওয়ে এবার বেছে বেছে হিন্দু পর্যটকদের মারা হল। এক মহিলা তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর আর্জি জানানোর এক করুণ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলছেন, মুসলিম নন নিশ্চিন্ত হয়েই তাঁর স্বামীকে গুলি করা হয়েছে।
আবার অন্য ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গুলি মারার আগে বহু পর্যটকের প্যান্ট খুলে দেখা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি যে মুসলিম নন সেটা নিশ্চিত হয়েই গুলি করা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যেখানে পহেলগাঁও হামলায় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার হাত দেখছেন। সেখানে পাকিস্তান সরাসরি তা অস্বীকার করে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহকেই কারণ হিসেবে তুলে ধরছে। ঠিক যেমনটা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে সেই লস্কর নেতা বলেছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ দাবি করেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ের হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগসূত্র নেই। নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, ছত্তীসগঢ়, মণিপুর এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে বিদ্রোহ চলছে। মনে হচ্ছে, এই হামলায় কোনও বিদেশি হস্তক্ষেপ নেই, বরং স্থানীয় বিদ্রোহের ফল!’’ উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’, যারা পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে এসেছে। অর্থাৎ ঘরের খেয়ে ঘরেই সিঁদ কাটার ব্যবস্থা। ভারত এখনও কারও দিকে আঙুল তোলেনি। তবে এদিন কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃতদের শ্রদ্ধা জানানোর ছবি শেয়ার করে লিখেছেন। ভারত সন্ত্রাসীদের সামনে ঝুকবে না। এই হামলার পিছনে থাকা সমস্ত কুচক্রীদের কোনও মতেই ছাড়া হবে না। একই সঙ্গে নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই হামলার কুচক্রীদের উপযুক্ত জবাব দেবে ভারত।
ভারত কি জবাব দেবে সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু এই সময় গোটা ভারতকে এক হতে হবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, দেশ বিরোধী শক্তিগুলি ভারতকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। কখনও কাশ্মীর, কখনও মুর্শিদাবাদ। একদিকে পাকিস্তান থেকে এসে কাশ্মীরে হামলা চলছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ দিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে হামলা চলছে। তাই স্থানীয় মানুষদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। না হলে এরপের হামলা আপনার বাড়ির কাছেই হতে পারে।
Discussion about this post