চার দশক পর রবিবার অবশেষে খুলল পুরী জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডার। কি আছে রত্নভাণ্ডারে! জানলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। রবিবার ৪৬ বছর পর খোলা হয়েছিল জগন্নাথ দেবের রত্ন ভান্ডার। কী কী পাওয়া গিয়েছে রত্নভান্ডার থেকে? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল রত্নভান্ডারে প্রবেশাধিকার পাওয়া ১১ সদস্যের দলের এক প্রতিনিধিকে। কিন্তু তিনি বিষয় মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ওড়িশা রিভিউ নামে একটি ম্যগাজিন থেকে রত্ন ভান্ডার অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। রত্নভান্ডারের ভিতরে দুটি কক্ষ রয়েছে। একটি বাইরের কক্ষ। একটি ভিতরের কক্ষ। দুই কক্ষের ভিতরেই রয়েছে জগন্নাথ, বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার অলঙ্কার সামগ্রী। ২০১১ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত ওড়িশা রিভিউর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ওড়িশার রাজা অনঙ্গভীম দেব জগন্নাথদেবের অলঙ্কার তৈরির জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষকে প্রায় দেড় হাজার কেজি সোনা দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী রয়েছে রত্নকক্ষের প্রথম ঘরে, জগন্নাথের একটি সোনার মুকুট এবং তিনটি সোনার হরিদকণ্ঠী মালা। প্রত্যেকটি তৈরি অর্থাৎ ১৪০০ গ্রাম সোনা দিয়ে। রত্নভান্ডারে রয়েছে জগন্নাথ এবং বলভদ্রের সোনার তৈরি শ্রীভুজ বা সোনার হাত। রত্নকক্ষে রয়েছ জগন্নাথ এবং বলভদ্রের সোনার পা-ও। ভিতরের রত্নকক্ষে আছে ৭৪টি সোনার গহনা। প্রত্যেকটির ওজন কমপক্ষে ১ কেজি করে। রয়েছে বেশ কয়েকটি সোনার প্লেট। যেখানে হিরে, প্রবাল, মুক্তো, পান্না দি বসানো রয়েছে। জগন্নাথের অলঙ্কারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে সোনার তৈরি ময়ূরের পালক। কপালে পরার সোনার পট্টি। যার নাম চালুপাটি। রয়েছে জগন্নাথের সোনার কানের দুল শ্রীকুণ্ডল। সোনার কদম্ব মালা, সোনার চক্র, সোনার গদা, সোনার পদ্ম এবং সোনার শঙ্খ। রত্নখচিত একটি ত্রিনয়নও রয়েছে জগন্নাথ এবং সুভদ্রার গয়নার তালিকায়।
যার মাধের অংশে রয়েছে একটি ঝলমলে পান্না। যার আকার হাসের ডিমের থেকেও বড়। ছাড়াও রয়েছে সোনা, হীরে, প্রবাল, মুক্তর থালা। ১৪০টি ভারী রূপার গহনাও রয়েছে মন্দিরের ভিতরের রত্নকক্ষে। ওড়িশা রিভিউর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে রত্নভান্ডারেই এই সোনা, রূপা, হীরে, প্রবাল, মুক্ত, পান্না, রূপা থাকার কথা। রবিবার, বাইরের কক্ষটি থেকে যাবতীয় অলঙ্কার সিন্দুকে ভরে অস্থায়ী ভল্টে রাখা হলেও ভিতরের কক্ষ থেকে প্রায় কিছুই বার করে আনা যায়নি বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের প্রচারে এই রত্নভান্ডারের কথা শোনা গেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে।
এই আবহেই ওড়িশা হাইকোর্টের নির্দেশে বিজেপি সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বৈঠকে আনা হবে রত্নভাণ্ডারের চাবি। যদি দেখা যায় চাবি দিয়ে খোলা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে ভাঙা হবে রত্নভাণ্ডারের তালা। জগন্নাথধামের অন্দর-ভাণ্ডারে বৈদুর্যমণি, নীলকণ্ঠমণি-সহ একাধিক মূল্যবান রত্ন রয়েছে বলে দাবি পাণ্ডাদের। পুরী জগন্নাথ মন্দির সেবায়েত বিজয় সিংহারি বলেন, আমার বাবা বহু বছর আগে দেখেছিলেন জগন্নাথের রঘুনাথ বেশের প্রচুর মনিমানিক্য এখানে আছে। ১৯৭৮ সালে শেষবার অডিট হয়েছিল পুরীর মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের। ক্ষমতায় এসেই পুরীর মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয় ওড়িশার বিজেপি সরকার।
Discussion about this post