গত দেড় মাসে পর পর রেল দুর্ঘটনা। কাঞ্চনজঙ্ঘা, ডিব্রুগড়, হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেস। এরপরেও রেলমন্ত্রী পদে বহাল অশ্বিনী বৈষ্ণব। কী ভাবে? প্রশ্ন বিরোধীদের। পার্ট টাইম রেল মন্ত্রী বলে কটাক্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। রেল বাজেট কোথায়? কবচ ব্যবস্থার কি হাল? মঙ্গলবার সকালে হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর আরও একবার প্রশ্নের সম্মুখীন রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্নিনী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে ছিলেন আমলা, সমাজ মাধ্যমে বরাবর বেশ অ্যাক্টিভ। বিরোধীরা বলে থাকেন রিল বানাতেও তিনি বেশ করিৎকর্মা। অশ্বিনী বৈষ্ণব ভারতের ৩৯ তম রেলমন্ত্রী। বর্তমানে রেল সহ আরও ২ টি মন্ত্রকের দায়িত্বে তিনি রয়েছেন। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক ও ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি।
গত দেড় মাসে পর পর তিনটি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার সাম্প্রতিকতম সংযোজন হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেস। কী ভাবে? তাহলে রেলের সুরক্ষায় কোথাও কি গাফিলতি থেকে যাচ্ছে? কবচ কোথায়? রেলের জন্য আলাদা বাজেট নেই কেন? বন্দেভারত, বুলেট ট্রেনের মতো বিষয়গুলিতে নজর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রেলের নিরাপত্তা কোথায়? আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা, নতুন রেল লাইন পাতা, কবচ ব্যবস্থাকে তরাম্বিত করা, যাত্রী স্বাচ্ছন্দের থেকে এই বিষয়গুলি কি গুরুত্বপূর্ণ নয়? পর পর রেল দুর্ঘটনার পর এই প্রশ্নগুলি ক্রমশই জোরাল হচ্ছে। বলাবাহুল্য বিরোধীরা বিরোধিতা করার জন্য পরিসর পেয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে সংসদে বুলেট ট্রেনের উন্নতি নিয়ে বিস্তারিত বললেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বণিকসভার একটি অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, তাঁর আমলে রেলে বরাদ্দ আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন রেলকর্তারা বরং অন্য কথাই ভাবছেন। তাঁদের অনেকের ধারনা কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে রেলসফর। যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে যে কোনও লাইনে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অশ্নিনী বৈষ্ণবের হাতে যখন রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক, তখন তাঁকে আরও দুটি মন্ত্রকের দায়িত্বে আনা হল কেন? শোনা যাচ্ছে শুধুমাত্র বিরোধী শিবির নয়। খোদ এনডিএ জোটের শরিকদের থেকেও এই প্রশ্ন উঠে আসছে। একের পর এক দুর্ঘটনার পরেও কেন অশ্বিনী বৈষ্ণবকে সরানো হচ্ছে না। উঠছে প্রশ্ন।
১৯৯৪ ব্যাচের প্রাক্তন আমলা অশ্বিনীর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, রেলের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিবর্তে কসমেটিক সার্জারি বা রূপসজ্জার উপরে জোর দেন তিনি। তবে এই ভুল আগেও হয়েছে। তখন অবশ্য এক এক সময়ে রেলমন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লালু প্রসাদ যাদবের মতো নেতারা। অভিযোগ এঁরা সকলেই রাজ্যে নতুন নতুন ট্রেন উদ্বোধন করে সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়াতে চেয়েছিলেন। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দেননি। দেশের বিভিন্ন শহরের মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস হয়তো চালু হয়েছে, কিন্তু গত তিন বছরে অশ্বিনীর আমলে প্রবল উপেক্ষিত হয়েছে রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা।
Discussion about this post