খেয়াল করে দেখেছেন কিনা জানা নেই, তবে বিশ্বের যে কোনও বড় বড় সেতু আঁকাবাকাভাবে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, সেতুগুলিতে একটি বা একাধিক বাঁক থাকে। এটা কি কেবলই সৌন্দর্যের খাতিরে, নাকি এর পিছনে রয়েছে কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ। আসুন এই প্রতিবেদনে সে সম্পর্কে আসল কারণগুলি অনুসন্ধান করা যাক।
সাধরণত কোনও সেতুকে তিন ধরণের ওজন বহন করতে হয়। প্রথমত, নিজস্ব ওজন, দ্বিতীয়ত, যানবাহনের ওজন এবং নদী বা প্রকৃতির চাপ বা ওজন। একটি বড় সেতু দৈর্ঘ্যে অনেকটাই লম্বা হয়। স্বভাবতই সেতুটি অনেকগুলি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যখন অনেকগুলি যানবাহন সেই সেতুর উপর চলাচল করে তখন একটা কম্পনজনিত চাপ সৃষ্টি হয়। সেতুটি যত আঁকাবাকা হবে, সেই কম্পনের চাপ ততই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। আর সেতুটি সোজা হলে সেই চাপ ছড়িয়ে পড়ের সুযোগ পায় না। ফলে সেতুটি একসময় দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। মাটিতেও অনেক সময় সব জায়গায় সমান চাপ থাকে না। ফলে ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বাকা সেতুর পিলারগুলিকে সমানভাবে চাপ সহ্য করতে হয় না। ফলে রেহাই পায় সেতুটি।
বিশেষ করে লম্বা লম্বা সেতুগুলি একটানা গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন চালকরা। কারণ লম্বা সেতুতে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর সময় ক্লান্তি অনুভব করেন অনেক চালক। ঝিমুনি এসে যায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অপরদিকে আঁকাবাকা সেতু হলে চালকদের সতর্ক থাকতে হয়। এছাড়া সেতুটি যত আঁকাবাকা হবে ততই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে। কারণ সেতুর কোনও অংশ যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে দূর থেকে তা দেখা যাবে।
অপরদিকে বৈজ্ঞানিক কারণ হিসেবে বলা যায়, কোনও দীর্ঘ সেতুর চাপ স্থির রাখতে সেতুটিকে ধনুকের ন্যায় আঁকাবাকা করা হয়। ফলে নদীর জলের স্রোত, বন্যার সময় জলের চাপে সেতুর পিলারগুলি কাঠামো ঠিক ভাবে ধরে রাখতে পারে। এর পাশাপাশি আছে সৌন্দর্যের দিকটিও। দূর থেকে বা নদীর পার থেকে আঁকাবাকা সেতু দেখতে খুব সুন্দর লাগে। অনেকটা পিকচার পারফেক্ট বলা চলে। এই সমস্ত কারণের জন্য বিশ্বের সমস্ত লম্বা সেতুগুলি আঁকাবাকাভাবে তৈরি করা হয়, তাতে যতই রড-বালি-কংক্রিট বেশি খরচ হোক না কেন।
Discussion about this post