উত্তাপ বাড়ছে, মানে পৃথিবীর উত্তাপ। ১৮৮০ সালে পৃথিবীর তাপমাত্রা মাপা শুরু, কারণ তার আগে প্রযুক্তিগত কৌশলই জানা ছিল না মানুষের। দেখা যাচ্ছে, ১৮৮০ থেকে ১৯৮০ – এই ১০০ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল ০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আর ১৯৮০ সাল থেকে ২০২০ – এই সময়ের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে এটা গড় তাপমাত্রা। শহরাঞ্চলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার আরো খানিকটা বেশি। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, বেজিং, সাংহাই, টোকিও – সর্বত্রই এক অবস্থা। কুয়াশা আর ধোঁয়া মিলে ধোঁয়াশা- অনেক ক্ষেত্রেই যাতে ঢেকে যায় গোটা শহর।
এমন অবস্থা যে কৃত্রিম উপগ্রহর ক্যামেরার চোখেও শহরগুলোর স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায় না সে সময়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী ৭০-৮০ বছরের মধ্যে হতে পারে মহাপ্রলয়। সমুদ্রের জলরাশি বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। উপকূল এলাকাগুলো ডুবে যাবে। নদীর জল সমুদ্রে পৌঁছতে না পেরে দু’কূল ছাপিয়ে প্লাবিত করবে দু’পাশের শহর, গ্রাম, ক্ষেত, খামার সব। এতেই শেষ নয়, প্রবল বন্যার ফলে দেখা দেবে পানীয় জলের অভাব, সঙ্গে দোসর নানা জলবাহিত রোগ। কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারাবেন। দুই মেরুর বরফ গলে সমুদ্রের জল বাড়বে, পার্বত্য অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে বাড়বে নদীর জল। সব মিলিয়ে বিরাট ধ্বংসের সম্মুখীন আমরা।
আর এর জন্য দায়ী আমরাই। মানুষ। মানুষের লোভ এবং মানুষের অজ্ঞতা। গাছ কেটে জঙ্গল সাবাড়, কারণ জঙ্গলের খনিজ দরকার, আর বাসস্থান তৈরির প্রয়োজন। আর আছে পেট্রোল, ডিজেল। তেল যত বেশি ব্যবহার হবে, তত বেশি বিক্রি, তত বেশি মুনাফা।
তাই কিছু মানুষ চেয়ে এসেছে এই তেল নির্ভর যানবাহন ব্যবস্থা এবং শিল্প বজায় থাকুক এবং তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক। ফলে দূষণে ভরেছে বিশ্ব।
তবে শুধু যে পেট্রোল-ডিজেলের দূষণ তাই নয়, সঙ্গে আছে আরো কিছু। ঘরে ঘরে এসি, ফ্রিজ। যা থেকে নির্গত হয় ক্লোরোফ্লুরোকার্বন নামের এক গ্যাস। যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং বায়ুমণ্ডল কে বিষাক্ত করে তোলে। আর কার্বন ও কার্বন সমৃদ্ধ বিভিন্ন গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কে ঘিরে তৈরি করছে গ্রীন হাউস এফেক্ট। এই গ্রীন হাউস এফেক্ট হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কে ঘিরে রাখা দূষিত গ্যাসের আবরণ। এই আবরণ ভেদ করে সূর্যের আলো পৃথিবীতে এসে পড়ে, কিন্তু রাতে মাটি থেকে উত্তাপ বেরিয়ে বায়ুমন্ডলের মধ্যে দিয়ে আকাশে পৌঁছতে পারে না।
ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এই সব কিছুর সম্মিলিত ফল – বিশ্ব উষ্ণায়ন। আর তারই ফলশ্রুতি কখনও প্রবল খরা, কখনো প্রবল বন্যা এবং ধ্বংস। সাবধান না হলে শেষের সেদিন কিন্তু ভয়ঙ্কর।
Discussion about this post